ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনা থেকে কি কিছুই শেখার নেই?

 এম এ কবীর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ৫ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনা থেকে কি কিছুই শেখার নেই?

করোনাকালীন এই দুর্যোগে ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হচ্ছেন সবাই। গণজমায়েত এড়িয়ে গৃহে অবস্থান।

ব্যাকফুটে গিয়ে আপাতত বাঁচার এটাই উত্তম পন্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সে কথা বলছে। যান্ত্রিক সময়ের ব্যস্ত মানুষ আজ স্বেচ্ছা ঘরবন্দি। জীবনাচারে এসেছে অনেক পরিবর্তন। চিরচেনা দৃশ্যপট বদলে গেছে।

এই যে পরিবর্তন, এখান থেকে কি কিছুই শেখার নেই? প্রতিটি দেশ, সমাজ এবং প্রত্যেকে নিজের মতো করে এই সময় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। করোনাভাইরাস আমাদের শিখিয়েছে জীবনের ক্ষুদ্রতা ও ক্ষয়িষ্ণুতা। দুনিয়ায় এই বেঁচে থাকা সত্যিই সুন্দর! ফলে মানুষ এই জীবনের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। মনে করে, সে নিজেই জীবনের মালিক! অথচ সে একবার ভাবেও না, আকস্মিকভাবে এই জীবন তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে। মহান আল্লাহ দুনিয়ায় জীবনের ক্ষুদ্রতা এভাবে তুলে ধরেছেন : ‘পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত বৃষ্টির মতো, যা আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করি, অতঃপর তা দিয়ে জমিনে উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, আর মানুষ ও জীবজন্তু তা আহার করে থাকে। তারপর ভূমি যখন শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয় এবং এর (জমিনের) মালিকরা মনে করে এসব তাদের আয়ত্তাধীন, তখন রাতে বা দিনে আমার নির্দেশ এসে পড়ে। তারপর আমি তা এমনভাবে নির্মূল করে দিই, যেন গতকালও তার অস্তিত্ব ছিল না।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৪)

করোনাভাইরাস আমাদের শিখিয়েছে মানুষ শিল্পে, শিক্ষায়, শক্তিতে, সমরাস্ত্রে, বিজ্ঞানে ও প্রযুক্তিতে যতই উন্নতি লাভ করুক না কেন, সব কিছু মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের সামনে তুচ্ছ। সবকিছুই তার ইশারায় হয়। এই যে, আজকে বারবার হোম কোয়ারেন্টিন থাকার কথা বলা হচ্ছে, অতীতে এর সর্বোত্তম নজির দেখা যায় আসহাবে কাহাফের ঘটনায়। একদল যুবক নিজের ঈমান ও বিশ্বাস টিকিয়ে রাখার জন্য গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে এক দীর্ঘ ঘুমে তাঁরা ৩০৯ বছর পার করেছেন। বলা যায়, এটি ছিল দীর্ঘতম ‘হোম কোয়ারেন্টিন’। তাঁদের ঘটনা নিয়ে পবিত্র কোরআনে একটি সুরা নাজিল হয়েছে। সুরাটির নাম হলো সুরা কাহাফ।

মৃত্যু মানবজীবনের অনিবার্য নিয়তি ও পরিণতি। জীবমাত্র মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে- এ সত্য অস্বীকার করার সাধ্য কারো নেই। আর করোনাভাইরাস এই নির্মম সত্যকে আমাদের সামনে আরো জীবন্ত, আরো অনিবার্য করে তুলেছে। তাই মৃত্যুর জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকা উচিত। অসিয়তনামা লিখে রাখা সুন্নত। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে রাখা চাই। নিজের সব কাজ স্বচ্ছ ও পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন।

করোনাভাইরাস মুসলমানদের অজুর ইহলৌকিক উপকার চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। অজু অন্যতম ইবাদত। পরকালে অজুর অঙ্গগুলো দীপ্তমান হয়ে উঠবে এ কথা হাদিসে আছে। কিন্তু এই ভাইরাসের সময় যেভাবে হাত ধোয়ার প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে, তাতে অজুর ইহলৌকিক উপকারিতার কথা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। দেখুন, একজন মুসলমান প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচবার অজু করে। প্রতিবার অজুতে তিনবার করে হাত কব্জি পর্যন্ত এবং তিনবার করে কনুই পর্যন্ত ধৌত করতে হয়। এতে প্রতি অজুতে ছয়বার হাত ধৌত করতে হয়। আর দিনে পাঁচবার অজু করা হলে মোট ৩০ বার হাত ধৌত করতে হয়। আর এভাবে হাত ধৌত করতে পদ্ধতিগতভাবে মুসলমানদের ইসলামী শরিয়াতের পক্ষ থেকে ‘বাধ্য’ করা হয়েছে। আবার রাতে ঘুমানোর আগে অজু করার নির্দেশ রয়েছে। ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুত নামাজের জন্য অজু করতে হয়। দু’ক্ষেত্রেই ছয়বার করে হাত ধুতে হয়।

এছাড়া, একজন মানুষ প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচবার প্রাকৃতিক কাজ সারে। নানা কারণে অজু ভেঙে যেতে পারে। সব মিলিয়ে যদি আরো পাঁচবার অজু করা হয়, তাহলে কমপক্ষে ১২ বার অজু করতে হবে। তাহলে একজন মুসলমান যথাযথভাবে ইসলামের বিধান মেনে চললে তাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭২ বার হাত ধুতে হবে। তাছাড়া খাবার গ্রহণের আগে, মিসওয়াক করার আগে, ঘুম থেকে ওঠার পর হাত ধোয়া সুন্নত। আর হ্যাঁ, যে ব্যক্তি এভাবে হাত ধোবে, সে আল্লাহর ইচ্ছায় বহু ভাইরাস ও জীবাণু থেকে বেঁচে থাকতে পারে।

করোনাভাইরাস আমাদের পরকালের নির্মম বাস্তবতা শিখিয়েছে। পরকালে সন্তান তার মা-বাবাকে, বন্ধু তার বন্ধুকে ভুলে যাবে। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এই ভাইরাসও দূরে যাওয়া ও দূরে থাকার সর্বাত্মক নির্দেশনা দিচ্ছে। এর সঙ্গে কোরআনের এই আয়াতগুলো মিলিয়ে দেখুন : ‘সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাই থেকে, এবং তার মা-বাবা থেকে, তার স্ত্রী ও সন্তান থেকে। সেদিন তাদের প্রত্যেকের হবে এমন গুরুতর অবস্থা, যা তাদের নিজেদের সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ৩৪-৩৭)

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক থেকে মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য শিক্ষার উপাদান আছে। নারীরা শিখতে পারে যে, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য যেভাবে মাস্ক পরা হয়, ব্যাভিচার ও অশ্লীলতার মতো সামাজিক ভাইরাস রোধে পর্দার বিকল্প নেই। আর পুরুষরা এই মাস্ক থেকে এটা শিখতে পারে যে, যেখানে-সেখানে মুখের ব্যবহার করা যাবে না। মুখের লাগামহীন ব্যবহার নিষিদ্ধ।

করোনাভাইরাস সহ প্রতিবছর যেসব বিপদ ও বিপর্যয় নেমে আসে, তা মুসলমানদের তাওবা করতে উদ্বুদ্ধ করে, নিজেকে শুধরে নিতে ও সতর্ক হতে নির্দেশ দেয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি দেখে না যে তাদের প্রতিবছর একবার বা দুইবার বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়? এরপরও তারা তাওবা করে না, উপদেশ গ্রহণ করে না! (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২৬)। সুতরাং সচেতন হোন, নিজে সাবধান থাকুন, অন্যকে সাবধান থাকতে বলুন। কাজে চিন্তায় আচরণে মানবিক হোন। মনে রাখবেন, মানবিকতাই আপনার মনে শান্তির বারি বর্ষণ করতে পারে।

লেখক: সাংবাদিক


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়