ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এমসিসি মিউজিয়াম

ক্রিকেটের পুরনো ও অমূল্য ভান্ডার

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৭, ১৪ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্রিকেটের পুরনো ও অমূল্য ভান্ডার

লন্ডন থেকে ইয়াসিন হাসান: ডেভিড ওয়ার্নার স্ট্যান্ডের নিচে দাঁড়িয়ে তিনি। মাঝ ব্যাটে ড্রাইভ করছিলেন। মাথায় ডোরাকাটা টুপি। মুখভর্তি দাঁড়ি। ঘন গোঁফে ঢেকে গেছে ঠোঁট দুটো। কী নিখুঁত ব্যাট-প্যাডের রসায়ন। ব্র্যাডম্যান, বোথাম, সোবার্স, টেন্ডুলকাররা যদি ক্রিকেটের সেরা ছাত্র হয়ে থাকেন, তাহলে সেই স্কুলের শিক্ষক স্যার উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস, সংক্ষেপে ডব্লিউ জি গ্রেস।

আধুনিক ক্রিকেটের জনক। ক্রিকেটের তীর্থস্থান লর্ডসের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত স্থান ডব্লিউ জি গ্রেসের স্মৃতিস্তম্ভ। একটু পিছিয়ে আসলেই মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব মিউজিয়াম। ক্রিকেটের অমূল্য রত্মভান্ডার। কী নেই এখানে! শত বছরের ক্রিকেটের ঐতিহ্য ও স্মৃতির ধারক এই জাদুঘর। ক্রিকেটের ছোট-বড় স্মৃতিগুলো এত যত্ন করে এখানে রাখা হয়েছে যে, এখানে আসলে ক্রিকেটের প্রতি যে কারোরই ভালোবাসা বাড়তে বাধ্য।

 

অমূল্য ভান্ডারে বাংলাদেশের কিছু খুঁজতে চাইলে অনেক কষ্টও করতে হবে। অবশ্য লর্ডস মাঠের পাশে বুক উঁচিয়ে থাকা এই জাদুঘরে এসে বাংলাদেশের কিছু খুঁজতে চাওয়া বোকামিও! ৯৯’র বিশ্বকাপের সবগুলো দলের জার্সি এক ঘরে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে ঠাঁই পেয়েছে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের জার্সি। পাশে তার ব্যাট আর হেলমেট।

যে ব্যাট দিয়ে তিনি ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সেই ব্যাটটি রয়েছে লর্ডসের ভান্ডারে। এ ছাড়া ২০০৫ সালে বাংলাদেশ যেবার শ্রীলঙ্কা গিয়েছিল সেই দলের ক্রিকেটারদের অটোগ্রাফ সম্বলিত জার্সি আছে এখানে। এর বাইরে তেমন কিছু চোখে পড়েনি।

জাদুঘরের ম্যানেজার উইলিয়ামস থমাস বললেন, ‘আমাদের এখানে ক্রিকেটের অনেক পুরনো ও আকর্ষণীয় স্মৃতি জমা আছে। কিন্তু আমরা দুই তলার এ ভবনে সবগুলো একসঙ্গে রাখতে পারি না। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এগুলো প্রদর্শন করা হয়।’ মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) ক্রিকেটের আইনকানুন, শিল্প, ইতিহাস এবং ক্রিকেটের সমস্ত স্তরের সংস্কৃতির পরিচয় বিকশিত করেছে। এমসিসির অধীনে থাকা লর্ডস মিউজিয়াম ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরনো জাদুঘর।

 

লর্ডসের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই প্রথমে পড়বে উইলিয়াম থমাস স্যুট। এরপর ক্যাপ্টেন্স কর্ণার। সেই পথ থেকে সামনে এগোতো থাকলে ডানপাশে লর্ডসের প্যাভিলিয়ন, বাঁপাশে ইনডোর টেনিস কোর্ট। কয়েক কদম এগিয়ে গেলে পাওয়া যাবে জাদুঘর। শুনশান জাদুঘরে ঢুকতেই ডানপাশে চোখে পড়বে একটি স্প্যারো। ১৯৩৬ সালের ৩ জুলাই লর্ডসে বলের আঘাতে মারা গিয়েছিল পাখিটি।

পাশেই ডব্লিউ জি গ্রেসের প্রথম ম্যাচের স্কোরকার্ড, সেই ম্যাচের স্মৃতি হিসেবে লেখা চিরকুট আর পত্রিকায় ছাপানো ম্যাচ রিপোর্ট। কাঁচে ঘেরা শোকেসের ভেতরে রাখা গ্রেসের ব্যাট, জুতো, প্যাড। স্যার ডন ব্র্যাডমানের প্যাড এবং অফিসিয়াল ক্যাপ।  ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের স্কোর সুন্দর করে বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে।

 

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে কিংবা তারও পরে ক্রিকেট মাঠের স্কোরবোর্ড কেমন ছিল, তা জানতে আসতে হবে এখানে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষের মতে, ক্রিকেটের প্রথম স্কোরবোর্ডটি একমাত্র তাদের সংগ্রহশালায় রয়েছে। গোলাকার স্কোরবোর্ড, চারপাশে চার-ছক্কা, উইকেট, এক-দুই-তিন রান লেখা।

নিচ তলার ভেতরের রুমে মিনি ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরি করে ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা রেখেছে কর্তৃপক্ষ। যে কেউ চাইলে খেলতে পারবে ক্রিকেট ম্যাচ! দোতলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা ট্রফি স্ট্রান্ড। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বিভিন্ন ট্রফির পাশাপাশি ঐতিহ্যের অ্যাশেজের সবচেয়ে পুরনো ছোট্ট ট্রফিটি জায়গা করে নিয়েছে এই জাদুঘরে।

আশ্চর্যের বিষয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সংগ্রহশালার ভিড়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, কেন্ট প্রিমিয়ার লিগ, বিগ ব্যাশের বিভিন্ন দলের জার্সি রয়েছে এখানে। কেন? সেই ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ম্যানেজার। শেন ওয়ার্নের ৫০০ উইকেটের বল, মুত্তিয়া মুরালিধরনের ৮০০ উইকেটের বল রয়েছে এখানে। যদিও এ বলগুলোকে পরবর্তীতে সাইন করে আনা হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।

 

জাদুঘরের বাইরের দেয়ালে ক্রিকেটের দশটি বিশেষ মুহূর্তের ছবি টানানো হয়েছে।  যেখানে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের কেরানীগঞ্জের কিশোরদের ক্রিকেট ম্যাচের চিত্র। গত বছর উইজডেন-এমসিসি ক্রিকেট ফটো অব দ্য ইয়ারের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছিল ওই ছবিটি। যৌথভাবে রানার্সআপের পুরস্কারও পেয়েছিল ছবিটি।

জাদুঘরের পুরোটা ঘুরে বেড়াতে সময় লাগবে এক ঘন্টা। নিশ্চিত করে বলা যায়, ক্রিকেটের সমৃদ্ধ ও পুরনো ঐতিহ্য জানতে এবং কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতে চাইলে এখানে আসার বিকল্প নেই। ক্রিকেটের প্রতি শুধু ভালোবাসা বাড়বে না, হৃদয় থেকে বাড়বে শ্রদ্ধা।


রাইজিংবিডি/লন্ডন/১৪ জুলাই ২০১৯/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়