ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অপ্রতিরোধ্য ভারতের সামনে নতুন বাংলাদেশ

ইন্দোর থেকে ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ১৩ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অপ্রতিরোধ্য ভারতের সামনে নতুন বাংলাদেশ

ইন্দোরের হোলকার স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাস মাড়িয়ে মুমিনুল হক যখন বৃহস্পতিবার মাঠে নামবেন, তখন তার গায়ে থাকবে টেস্ট অধিনায়কের রাজসিক ব্লেজার। অধিনায়ক হিসেবে তার প্রথম টস। প্রতিপক্ষ ভারত।

বাংলাদেশের ১১তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হতে যাচ্ছে মুমিনুলের। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে দুই দশকে পা দিয়েছে। দীর্ঘ এই সময়ে বাংলাদেশের কী কী পরিবর্তন হয়েছে? নতুন অধিনায়ক বললেন, ‘২০ বছরে খেলোয়াড়দের মন মানসিকতায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। পারফরম্যান্স করার তাগিদ হয়েছে। সবাই অনেক বেশি মনোযোগী হয়েছে। অনেক বেশি পরিকল্পিত হয়েছে। পাশাপাশি চার দিনের ম্যাচ খেলার ইচ্ছা বেড়েছে।’

মুমিনুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভারতের আতিথেয়তা নিতে প্রস্তুত। মাঠে নামার আগে আলোচনায় বেশ কিছু বিষয়।

নতুন বাংলাদেশ

সাকিব আল হাসান দলে নেই। নিষেধাজ্ঞার কারণে দলের বাইরে। পারিবারিক কারণে দলে নেই তামিম ইকবালও। দুজনকে ছাড়া বাংলাদেশের টেস্টের রেকর্ড ভালো নয়। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে নতুন যাত্রা শুরু হচ্ছে এখান থেকেই। সাকিব নিষিদ্ধ থাকায় এক বছর দলে থাকতে পারবেন না। ভবিষ্যত ভাবনায় মুমিনুল হককে দেওয়া হয়েছে টেস্ট দলের দায়িত্ব। এই দলে আছেন একাধিক তরুণ ক্রিকেটার। যাদের নিয়ে তৈরি নতুন বাংলাদেশ। তাদের নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যায় মুমিনুলের, ‘যারা নেই তাদের নিয়ে পড়ে থাকলে তো হবে না। যারা আছে তাদের নিয়েই আমাদের খেলতে হবে। এখন সবাই অনেক বেশি মনোযোগী। আমার মনে হয়, সবাই অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়ে খেলবে।’

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ

টেস্ট ক্রিকেটের নতুন সংযোজন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ নয় দলকে নিয়ে আইসিসি চালু করেছে এই প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান বাদে সবকটি দল এরই মধ্যে খেলেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়শিপ।  বাংলাদেশের অপেক্ষা ফুরাচ্ছে বৃহস্পতিবার। মুমিনুলের মতে, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে সবাই একটা সুযোগ হিসেবে দেখছে। সবাই সেভাবে উদগ্রীব হয়ে আছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু, সেটাও ভারতের বিপক্ষে। সবাই পারফর্ম করার জন্য উদগ্রীব আছে।’

টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্সের আত্মবিশ্বাস

বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে কখনো টেস্ট জেতেনি। পারেনি টেস্ট ড্র করতেও। সীমিত পরিসরের ক্রিকেটে একাধিক সাফল্য থাকলেও টেস্টে বলার মতো পারফরম্যান্স হাতে গোনা কয়েকটি। তবে এবারের সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পারফরম্যান্স বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছে।  দিল্লিতে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিতেছিল বাংলাদেশ। নাগপুরে শেষ টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে চোখ রাঙিয়েছিল মাহমুদউল্লাহর দল। সিরিজ জেতা হয়নি বাংলাদেশের। কিন্তু টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্স ছিল ঈর্ষণীয়। সেই পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসে জ্বালানি পেয়েছে।

অপ্রতিরোধ্য ভারত

টেস্টে দীর্ঘদিন ধরেই অপ্রতিরোধ্য ভারত। ঘরের মাঠে ভারত টেস্টে সবশেষ হার মেনেছিল প্রায় তিন বছর আগে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া পুনেতে হারিয়েছিল টিম ইন্ডিয়াকে। এরপর ঘরের মাঠে টানা ১২ টেস্টে হারের মুখ দেখেনি ভারত। এ সময়ে ম্যাচ ড্র করেছে মাত্র তিনটি। বাকি ৯টিতে ভারতকে থামাতে পারেনি কেউ। এবার বাংলাদেশ কি পারবে ভারতকে আটকাতে?

মুমিনুল হক বলছেন, ‘এটা আমাদের জন্য সুযোগ। আমরা সবাই সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। লক্ষ্য অবশ্যই ভালো খেলা। আমরা জেতার জন্যই মাঠে নামব। আপনি যখন যাদের বিপক্ষেই খেলেন, প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালীই হোক, কেউ হারার জন্য মাঠে নামে না। সবাই সব সময় জেতার জন্যই মাঠে নামে। আমিও এভাবেই ভাবি। আমরা সব সময় সব ম্যাচে জেতার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামি।’

বিরাট কোহলির মতে, ‘বাংলাদেশ এ ধরনের কন্ডিশনে খেলে অভ্যস্ত। আমার বিশ্বাস তারা ম্যাচ সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়েই এসেছে এবং সেই মোতাবেক তারা খেলবে। ম্যাচে ফল পেতে আমাদেরকে নিজেদের খেলায় মনোযোগী হতে হবে। আমরা কোনো টেস্ট দলকে হালকাভাবে নিতে পারি না। বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান কিংবা বোলারকে আমরা সহজভাবে নিচ্ছি না। বাংলাদেশ যখন ভালো খেলে তখন তাদেরকে বেশ সামর্থ্যবান মনে হয়। তাদের ভালো ক্রিকেট খেলার সামর্থ্য রয়েছে। প্রতিপক্ষ হিসেবে আমরা তাদেরকে সম্মান করি। এজন্য আমরা আমাদের খেলায় বেশ মনোযোগী।’

প্রস্তুতির ঘাটতি?

২০১৭ সালে ভারতে একটি টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। হায়দরাবাদে ওই ম্যাচের আগে বাংলাদেশ খেলেছিল দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ। কিন্তু এবার পূর্ণাঙ্গ সফরে এসে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ নেই বাংলাদেশের। বিশেষজ্ঞদের মতে, টেস্ট ম্যাচে নামার আগে মাত্র দুই দিনের অনুশীলন পর্যাপ্ত নয়। প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজনের দরকার ছিল বলে মনে করছেন তারা।

তবে দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি দেখছেন না, ‘আমার কাছে মনে হয় না প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি আছে। আমরা আটজন টেস্ট দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। প্রত্যেকেই চার দিনের ম্যাচ খেলে এখানে এসেছি। আমি পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে ৮ থেকে ১০টা চার দিনের ম্যাচ খেলেছি। যারা আছে এ দলে, মুশফিক ভাই, রিয়াদ ভাই সবাই প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছে। আমার কাছে মনে হয় না যে, কোনো সমস্যা হবে। সবাই খেলার মধ্যেই ছিল। ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছে।

প্রত্যাশা নেই, চাপও নেই

বড় কোনো লক্ষ্য নেই মুমিনুলের। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান চান ভারতের বিপক্ষে সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে। মুমিনুল বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের কোনো চাপ নাই। কারণ আমাদের কোনো প্রত্যাশা নেই! আমাদের জিততেই হবে, এমন চাপ নেই। তবে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব। যখন কোনো খেলোয়াড় মাঠে নামে সে সব সময় জেতার জন্যই খেলে।’


ইন্দোর/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়