ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন থেকে বিসিবি যা শিখতে পারে

রাজকোট থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১০, ৫ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন থেকে বিসিবি যা শিখতে পারে

ছবি: ইয়াসিন হাসান

রাজকোটের মূল শহরের বাইরে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামের মূল ফটকের ভেতরে হাতের বাঁ পাশে আউটার মাঠ। সেখান থেকে একটু ভেতরে ঢুকলেই মূল স্টেডিয়াম।

চোখ ধাঁধানো, মনোমুগ্ধকর আর নয়নাভিরাম স্টেডিয়াম। মাঠ যেন সবুজের আচ্ছাদন। দেখলে মনে হয় সবুজের গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে পুরো মাঠে। স্টেডিয়ামের গ্যালারি গোছানো। বাড়িতে অতিথি এলে ঘর যেভাবে গুছিয়ে রাখা হয়, ঠিক সেভাবেই স্টেডিয়ামের চারপাশ ও গ্যালারি গুছিয়ে রেখেছে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। গ্যালারিগুলোতে নির্দিষ্ট কোনো সিট নেই। মাঠে যখন খেলা হয় তখন গ্যালারিতে চেয়ার পাতা হয়। সেটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ হোক আর ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ। ফলে গ্যালারির চেয়ার ভাঙা কিংবা নোংরা করার সুযোগ থাকে না।

ভারতের স্টেডিয়ামগুলোতে ম্যাচ পড়ে ভেন্যু রোটেশন পলিসি (ভিআরপি) অনুযায়ী। বিভিন্ন ভেন্যু ঘুরে ঘুরে খেলা হয়। ২০১৩ সালে পথচলা শুরু করা সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে ৬টি। কিন্তু দেখলে ঝোঝার উপায় নেই এখানকার সুযোগ-সুবিধা কতটা উন্নত।  মূল মাঠে ১২টি উইকেট। মাঠের পেছনে মোট ২৫টি অনুশীলন উইকেট। যে উইকেটগুলো আছে, সেগুলোও আবার বিভিন্ন প্রকারভেদে। কোনোটা বাউন্সি, কোনোটা স্লো, কোনোটা স্পিন সহায়ক, কোনোটা পেস সহায়ক। আবার কোনোটায় ঘাস আছে, কোনোটা একেবারে পাটা। যার যখন যে উইকেটে অনুশীলন করার প্রয়োজন, সব বন্দোবস্ত রয়েছে এখানে।

স্টেডিয়ামে এসে নিজের উচ্ছ্বাস লুকাননি বাংলাদেশ দলের মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম, ‘অসাধারণ সুন্দর স্টেডিয়াম। দুর্দান্ত সব সুযোগ সুবিধা।’ বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন আফিফ হোসেন। তরুণ আফিফের মুখেও একই কথা, ‘সুযোগ-সুবিধা ভালো, সবকিছুই ভালো ছিল। স্টেডিয়ামটাও অনেক ভালো। আশা করছি ভালো একটা ম্যাচ হবে।’

স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণে নিজস্ব কর্মীর পাশাপাশি বিভিন্ন এজেন্সির সাহায্য নিয়ে থাকে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। তাদের স্থায়ী কর্মী আছে ৪০-৫০ জন। কিন্তু খেলার আগে-পরে কাজ করে ১৫০-২০০ জন। বিভিন্ন এজেন্সি থেকে লোক নিয়ে স্টেডিয়ামের যত্ন নেওয়া হয় তখন।   

অবশ্য স্টেডিয়ামের ওপর সরকারের কোনো হাত না থাকায় নিজেদের মতো অর্থ ব্যয় করতে পারে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। মাঠ কীভাবে চলবে, কীভাবে সংস্কার হবে এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নতির জন্য সরকারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না তাদের। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিজেদের উদ্যোগে এসব পারে না।

বিসিবির অধীনে রয়েছে শুধুমাত্র মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম। কিন্তু ওই স্টেডিয়ামও সবশেষ কবে সংস্কার করা হয়েছে, তা অজানা। স্টেডিয়ামের গ্যালারির চেয়ার ভেঙেছে দীর্ঘদিন হলো। শহীদ মুশতাক স্ট্যান্ডের চেয়ারের বেহাল দশা। গ্যালারির কোনোটায় চেয়ার নেই, আবার কোনোটায় থাকলেও ভাঙা। মাঠে উপস্থিত হওয়া দর্শকদের বাথরুম এবং অনান্য সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। আক্ষেপ নিয়েই তাই টিম ম্যানেজমেন্টের এক কর্মকর্তা বললেন, ‘২০১১ বিশ্বকাপের পর স্টেডিয়ামের কাজে হাত দেওয়া হয়নি। আবার আকেরটা বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, কিংবা ফতুল্লায় বিসিবির করার কিছু থাকে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) কাজ না করালে সেগুলোর উন্নয়ন হয় না মোটেও।

সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ কম হলেও খেলা হয় নিয়মিত। স্টেডিয়ামের সেক্রেটারি হিমাংশ শাহ বলেন, ‘আমাদের এখানে ৩৬৫ দিনের ২০০ দিন খেলা থাকে। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট, মেয়েদের খেলা, ছেলেদের খেলা, আইপিএল ম্যাচ- সবকিছু হয়। ব্যস্ত সময় কাটে এখানে।’

বছরে ২০০ দিন সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম ব্যস্ত থাকলেও বোঝার উপায় নেই। কারণ প্রত্যেকবার এখানে আপনাকে উপহার দেবে পরিপাটি, সুন্দর, গোছানো ও পরিছন্ন স্টেডিয়াম।


রাজকোট/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়