ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ককটেল রেখে ফাঁসাতে গিয়ে নারীসহ আটক ৪

গাজীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৬, ৬ মে ২০২১   আপডেট: ২২:২৪, ৬ মে ২০২১
ককটেল রেখে ফাঁসাতে গিয়ে নারীসহ আটক ৪

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারের এক গুদাম থেকে পাঁচটি ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার (৬ মে) বিকেলে এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী তিন যুবক ও এক নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

সাংবাদিক পরিচয়দানকারীরা হলো— দিনাজপুর সদর উপজেলার মধ্যে বালুবাড়ী গ্রামের মৃত সাজ্জাদ আলীর ছেলে মো. তানভীর আহম্মেদ (৪০), বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানাধীন আফালকাটি গ্রামের শেখ মো. রুহুল আমীনের ছেলে শেখ মাহমুদুল হাসান (৩১), নাটোরের লালপুর থানার টিটিআই লালপুর গ্রামের মশিউর রহমানের ছেলে মাহমুদুর রহমান (২৫) ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার গেয়ানপাড়া গ্রামের বসিরুল হক বাদলের মেয়ে রহিমা আক্তার মুক্তা (২৪)।

ভুক্তভোগী কফিল উদ্দিন বলেন, “বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অপরিচিত এক ব্যক্তি চুন কেনার কথা বলে দরদাম ঠিক করেন। সেসময় তিনি হাতে থাকা বাজারের ব্যাগ আমার দোকানে রাখেন। মিনিট বিশেক পর এসে চুন ও ব্যাগ নেবেন বলে জানান। এর আধা ঘণ্টা পর এক নারীসহ তিন যুবক সাংবাদিক পরিচয়ে এসে দোকানের বিভিন্ন জায়গা তল্লাশি শুরু করেন। 

‘পরে ওই ব্যক্তির রেখে যাওয়া ব্যাগটি তল্লাশি করে তাতে ককটেল পাওয়ার কথা জানিয়ে ছবি ওঠানো শুরু করেন। এর এক পর্যায়ে তারা আমাকে নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে আট লাখ টাকা দাবি করেন। এসময় আশপাশে থাকা অন্যান্য ব্যবসায়ীরা এসে ভিড় করেন। এবং বিষয়টি জানতে চান।”

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘স্থানীয় সাংবাদিক মো. রাকিবুল হাসানের সহায়তায় তারা আমাকে ফাঁসানোর জন্যই দোকানে ককটেল রেখে টাকা দাবি করেছিল। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে রাকিব ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সেসময় কেউ একজন ককটেল উদ্ধারের খবর জানিয়ে পুলিশে খবর দেন।’

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নয়ন ভুইয়া জানান, জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯ এ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুরো ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের জিজ্ঞাসাবদ করেন। তাদের কথায় অসঙ্গতি পাওয়ায় পুলিশী হেফাজতে থানায় নেওয়া হয়।

বরমী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কফিল উদ্দিন প্রায় ৫০ বছর ধরে এ বাজারে পান-চুনের ব্যবসা করে আসছেন। বাজারে শান্তশিষ্ট লোক হিসেবে তার পরিচিতি আছে। তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ এ পর্যন্ত কেউ করেননি।’

আজকের আলোকিত সকালের সম্পাদক ও প্রকাশক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘পুলিশী হেফাজতে থাকা তানবীর বিশেষ প্রতিনিধি, শেখ মাহমুদুল হাসান, মাহমুদুর রহমান ও রহিমা আক্তার মুক্তা স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছেন। আলোকিত সকালের শ্রীপুর প্রতিনিধি মো. রাকিবুল হাসান সংবাদ সংগ্রহের জন্য তাদের ওই এলাকায় নিয়ে যান। তাদের চাঁদাবাজির ঘটনাটি আমি মুঠোফোনের মাধ্যমে জেনেছি। তাদের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় কখনই প্রতিষ্ঠান নেবে না।’

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজি রাকিব বলেন, ‘মুক্তা ও তার সহযোগীরা নাচনাপাড়া এলাকার একটি মাদ্রাসায় চাঁদা দাবি করে। আমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে তাদেরকে চাঁদা দিতে নিষেধ করি এবং স্থানীয় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করি। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে জীবননাশের হুমকি প্রদান করে। বিষয়টি পাথরঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। এ ছাড়াও স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল পাথরঘাটা নিউজ এর সম্পাদক নাজমুন্নাহার সুখী এবং নাচনাপাড়া হাফিজি মাদ্রাসা কমিটির পক্ষ থেকেও থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল।’

গাজীপুর জেলা পুলিশের কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আল-মামুন জানান, ককটেল উদ্ধারের খবরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকান মালিক, সাংবাদিক ও বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা হয়। পরে সাংবাদিকদের কথায় অসঙ্গতি পাওয়ায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। এ বিষয়ে হেফাজতে নেয়া সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রফিক সরকার/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়