ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জমজমাট এফডিসি এখন প্রাণহীন

রাহাত সাইফুল  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ২১ মে ২০২২   আপডেট: ১৮:৩৬, ২১ মে ২০২২
জমজমাট এফডিসি এখন প্রাণহীন

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস দীর্ঘ ও গৌরবের। নব্বই দশকের শেষের দিকে অশ্লীলতা ভর করে এ দেশের চলচ্চিত্রে। ধীরে ধীরে হলবিমুখ হয় দর্শক। চলচ্চিত্র হারায় অতীত গৌরব। 

বর্তমানে বিএফডিসিতে শিল্পীদের পদচারণা নেই। চলচ্চিত্রের শুটিংও হয় কালেভদ্রে। এখন বিএফডিসির ঝর্না স্পটে গানের দশ্য, সুইমিং পুলে সাঁতার আর কড়াই তলায় মারামারির দৃশ্য দেখা যায় না। এসব স্থান এখন যেন ময়লার ভাগাড়। শোনা যায় না দরাজ কণ্ঠের সংলাপ। সাড়া-শব্দহীন বিএফডিসি প্রাণহীন।

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নির্বাচনকেন্দ্রীক শিল্পী ও কলাকুশলীদের পদচারণায় জমজমাট থাকে এফডিসি চত্তর। এবারের নির্বাচনে শিল্পীরা বাকযুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। নির্বাচনের কৌশল অবলম্বন করতে গিয়ে অনেকেই হয়েছেন সমালোচিত ও হাসির পাত্র। নির্বাচন ঘিরে অনেকেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। নির্বাচন ঘিরে ঘটেছে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও। নির্বাচনের ছয়মাস পার হলেও এখনও সাধারণ সম্পাদক পদের সুরাহা হয়নি। জায়েদ-নিপুণ দুজনই একই পদের দাবিদার। মূলত এই পদ নিয়েই দুই ভাগে বিভক্ত বর্তমান শিল্পী সমিতি। জায়েদ প্যানেলের নির্বাচিতরা এখনও কোনো মিটিংয়ে অংশ নেননি। এই নির্বাচন ঘিরে অনেক কাঁদা ছোড়াছুড়ি হয়েছে। এরপর থেকে এফডিসি আরো জনশূন্য হয়ে পড়েছে। 

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি কিংবা অন্য কোনো সমিতিতে এখন আর তেমন আড্ডায় মজে না সদস্যরা। এ ছাড়া চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনুষ্ঠান সিনিয়র শিল্পী ও কলাকুশলীর পাশাপাশি বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীরা উপস্থিত হতেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠানগুলোতে তা চোখে পড়েনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  কয়েকজন সিনিয়র শিল্পী জানান, চলচ্চিত্রে এতো নোংড়ামি আর কখনও দেখিনি। যে কারণে অনুষ্ঠানে যেতেও তারা আগ্রহ পাচ্ছেন না। তাদের প্রশ্ন কে চাইবে নিজেকে বিতর্কে জড়াতে? তাই এফডিসি যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। 

আজ ২১ মে চলচ্চিত্রের মাদার সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশকদের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনটি স্থগিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। আদালতে রিট করেন প্রযোজক মোহম্মদ হোসেন। এর বাদি খোরশেদ আলম খসরু। সেই রিটের প্রেক্ষিতেই নির্বাচনে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে প্রতিবারের মত এবারের নির্বাচনে নেই সেই আগের জৌলুশ। নীরব নিস্তব্ধ এফডিসিতে চায়ের কাপে ঝড় ওঠে না- কে হারবে বা কে জিতবে। শিল্পী সমিতির নির্বাচনের পর সংশ্লিষ্টদের এসব নিয়ে মাথাব্যথা কম। যতটুকু দৌড়াদৌড়ি নেতাদের। তারা চেয়ারের জন্য দৌড়-ঝাপ করে বেড়াচ্ছেন, অন্যরা নীরব।  

তবে এফডিসিতে মানুষের পদচারণা কম হওয়ার আরো একটি গুরত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। কথায় আছে- মরার উপর খরার ঘা। এফডিসিতে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। পুরনো গেইট দিয়ে এফডিসিতে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বর্তমানে যেখানে গেইট রয়েছে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এফডিসির কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ঘেঁষে বর্তমান দীপ্ত টিভির কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত সেই গেইট। এ গেইট নিয়েই যাত্রা করেছিল এফডিসি। পরে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে চলচ্চিত্রকর্মীদের দাবির মুখে সেই গেইটটি বন্ধ করে হাতিরঝিল লেকের বিপরীত পাশে গেইট তৈরি করে দেওয়া হয়। পুরানো গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে নোংড়া পথ দিয়ে অনেকখানি হাঁটতে হয়।এর মধ্যে গেটের বাহিরে চলছে রাস্তা নির্মাণ কাজ। ময়লা-আর্বজনার মধ্য দিয়েই এফডিসিতে প্রবেশ করতে হয়। যে কারণে না-পারতে কেউ এফডিসিতে যাচ্ছে না। 

সব কারণ মিলে যেন একে একে দুই হয়েছে। হাতিরঝিল সংলগ্ন একটি পকেট গেটের প্রস্তাবনা থাকলেও সেটির অগ্রগতি এখনও দৃশ্যমান নয়। এই গেইটটি খুলে দেওয়া হলে হয়তো দুর্ভোগ কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা। সিনেমার শুটিংয়ে পরিপূর্ণ হোক এফডিসির প্রতিটি ফ্লোর- শুটিং, লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনে জমজমাট হোক এফডিসি চত্বর এমন দিনের প্রহর গুনছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা। 
 

ঢাকা/রাহাত

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়