ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জমিদার বাড়ি এখন পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার

আবু কাওছার আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১২, ২২ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৪:১৮, ২২ জানুয়ারি ২০২১
জমিদার বাড়ি এখন পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার

কয়েক দিন ধরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা ও আনন্দ ভ্রমণের প্রস্তুতি চলছিল। অনেক পরিকল্পনার পর স্পট হিসেবে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ঐতিহাসিক মহেড়া জমিদার বাড়ি নির্ধারণ করা হয়। যা বর্তমানে মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে পরিচিত। এই প্রথম টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বাইরে সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়। তারিখ ঠিক করা হয় মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর)। মঙ্গলবার সকালে তিনটি বাসে করে মহেড়া জমিদার বাড়িতে যান প্রেসক্লাবের সদস্যরা ও তাদের পরিবার।

এই জমিদার বাড়ির সামনে প্রবেশপথের আগেই চোখে পড়ে ‘বিশাখা সাগর’ নামের বিশাল দিঘি। বাড়িতে প্রবেশের জন্য আছে দুটি সুরম্য ফটক। মূল ভবনের পেছনে পাসরা পুকুর ও রানী পুকুর নামে আরও দুটি দিঘি আছে। আছে ফুলের বাগান। বিশাখা সাগর সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে বিশাল আমের বাগান ও বিশাল তিনটি ভবনের সঙ্গে আছে নায়েবের ঘর, কাছারি ঘর, গোমস্তাদের ঘর ও দিঘি। সেদিকেই আছে চারটি লজ—চৌধুরী লজ, মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, কালীচরণ লজ। ৮ একর জমির ওপর অবস্থিত মহেড়া জমিদার বাড়িতে প্রবেশের মূল্য ৮০ টাকা।

১৮৯০ সালের আগে স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৮৯০ সালে বুদাই সাহা, বুদ্ধু সাহা, হরেন্দ্র সাহা এবং কালীচরণ সাহা চার ভাই মিলে জমিদারি পত্তন করেন। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম সাহা পদবি বাদ দিয়ে রায় চৌধুরী পদবি গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়িতে হামলা করে। তার জমিদার বাড়ির নারীসহ পাঁচ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তী সময়ে জমিদার বাড়ির সদস‌্যরা লৌহজং নদী পেরিয়ে দেশত্যাগ করেন। ওই বাড়িতেই মুক্তি বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে এ জমিদার বাড়িতে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়।
মহেড়া জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নাটিয়াপাড়া বাজার থেকে আনুমানিক চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

নিভৃত পল্লিতে অনিন্দ্য সুন্দর মহেড়া জমিদার বাড়ি কালের নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে আজও। এখানকার পাতাবাহারবেষ্টিত ফুলের বাগান যেন আগন্তুকদের বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকে। গাছে গাছে সকাল-সন্ধ্যা পাখির কলকাকলিতে মুখর, সৌম্য-শান্ত পরিবেশ এনে দেয় অন্যরকম অনুভূতি।

মহেড়া জমিদার বাড়ি দেখতে আসা শামীম আল মামুন বলেন, ‘টাঙ্গাইলে যে কয়টি পর্যটনকেন্দ্র আছে তার মধ্যে মহেড়া জমিদার বাড়ি অন্যতম। এখানে আসলে জমিদারদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যায়।’

রেজাউল করিম নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, ‘মহেড়ায় ঘুরতে ভালো লাগে। তবে প্রবেশমূল্য অনেক বেশি।’

ভ্রমণপিপাসু আজমেরী স্নিতা বলেন, ‘ট্রেনিং সেন্টারটি পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকলেও এটি ভালো পর্যটন স্পট। ভ্রমণের নিরাপদ জায়গা। সুযোগ হলে আবার এখানে আসব।’

কাওছার/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়