ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনে চলছে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল

রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪০, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১০:৪২, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনে চলছে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল

কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের ছাদের পলিস্টার খসে রড বের হয়ে এসেছে

প্রায় শতবর্ষী জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনে চলছে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা। ব্রিটিশ আমলের এই ভবনটিতে এখনো সেই পুরোনো বিদ্যুৎ লাইনের তার ঝুলছে রুমে রুমে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত মাথার উপরে খসে পড়ছে ছাদের পলেস্টার। আর এর ফলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সেবাগ্রহীতা ও চিকিৎসকরা। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের (সদর হাসপাতাল) কার্যক্রম বর্তমানে পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরিচালনা করা হচ্ছে। ভবনটিতে থাকা বিদ্যুৎ সংযোগগুলো অনেক পুরাতন। ফলে ঘটতে পারে আরো বড় দুর্ঘটনা। 
হাসপাতালের ভেতরের কক্ষগুলোর দরজা জানালা ভাঙা অবস্থায় রয়েছে, পাখাগুলোতেও মরিচা ধরেছে।

নগরীর ঠাকুরপাড়া থেকে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ফিরে যাওয়ার সময় লক্ষী রানী বলেন, ‘বাপু আই গরিব মানুষ। দোকানতুন আর ওষুধ কিনি খাইবার টিয়া আর নাই। এই ভাঙা হাসপাতালে ডাক্তার দেহান ছাড়া আর গতি নাই। আই অনেক বছর ধরি এই হাসপাতালে ডাক্তার দেহায়। বেক্কুন রুমের ভিতরে আগেতো সব ভাঙা দেহা যাইতো এহন রং গরি হালাতে এতো ভাঙ্গা দেহা যায় না। তবে মাঝেমধ্যে রঙের ফেলাস্টার গার উদ্দি আই হরে। আর মনে হয় যে কোনো সময় এই হাসপাতাল ভাইঙ্গি হরি যাইতে হারে।’

আনোয়ার হোসেন নামের ৭০ বছর বয়সী এক প্রবীণ বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলের এই সদর হাসপাতালটি বদলে কখনো নতুন ভবনের হাসপাতাল হবে কিনা কেউ বলতে পারে না। ছোট থেকে যে ভবনে আমরা চিকিৎসক দেখাইতাম এখনো একই ভবনে চিকিৎসক দেখাতে হয়। আপনারা দেখবেন এই শীতকালে হাসপাতালের প্রতিটি কক্ষই স্যাতস্যাতে হইয়া আছে।’

হাসপাতালের পাশের একটি বাড়ির বাসিন্দা মনির বলেন, ‘এই হাসপাতালটি সদর এলাকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল। অসহায় নারী ও গরিব লোকজন এ স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সেবা নিয়ে থাকেন। এখন হাসপাতালের এই খারাপ পরিস্থিতি দেখে অনেক রোগী আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী চিকিৎসক বলেন, সরকারি চাকরির কারণে বাধ্য হয়ে এখানে সেবা দিতে আসি। সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকতে হয়। এখানে বসার ব্যবস্থা তেমন ভালো না। পুরাতন আসবাবপত্র ব্যবহার করেই আমাদের কাজ চালাতে হয়।

হাসপাতালের রিউমাটোলজি বর্হিবিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. সাদাব সাউদ সানী বলেন, ‘আমার মাথার ওপরে প্রতিনিয়ত ছাদের পলেস্টার খসে পড়ে। আর ছোট ছোট গাছের শিকড় রুমের চারপাশেতো আছেই। যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।’

কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এম এ করিম খন্দকার বলেন, ‘পরিত্যক্ত এই ভবনগুলোতে আমরা রোগিদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে সবসময় আতঙ্ক কাজ করে। আমাদের চিকিৎসকদের জন্য যে কোয়ার্টার দেওয়া হয়েছে, তাতে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। চিকিৎসকদের থাকার ব্যবস্থাটা যদি থাকতো তাহলে হাসপাতালের এরিয়াতে থেকেই চিকিৎসকরা দ্রুত কর্মস্থলে আসতে পারতেন এবং রোগীদের সেবা দিতে পারতেন।এখন থাকার ব্যবস্থ্যা না থাকায় সবাই দূরদূরান্ত থেকে এসে ডিউটি করেন।’

কুমিল্লা জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন, ‘কুমিল্লা জেলায় অন্যান্য হাসপাতালের চাইতে এই জেনারেল হাসপাতাল অনেক পুরাতন। বর্তমানে হাসপাতালের ভবনটি এতই জরাজীর্ণ, যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। মাস খানেক আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে যাওয়ার পর বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালের জন্য বহুতল ভবনের অনুমতি দেবেন। কুমিল্লায় অলরেডি লাকসাম হাসপাতাল ভবনের কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। আশাকরি কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালেরও অনুমোদন হয়ে যাবে।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়