ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তাদের হাতে আলোর মশাল || ইয়াসিন হাসান

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ২৭ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তাদের হাতে আলোর মশাল || ইয়াসিন হাসান

সময়ের পরিক্রমায় বদলে যায় সব কিছু। প্রকৃতির এই অমোঘ সত্যের ব্যতিক্রম নয় কিছুই। বাংলাদেশ ক্রিকেটেও বইছে দিন বদলের হাওয়া।

 

গত শতাব্দীর শেষ দিকে হয়েছিল শুভ সূচনা। আর এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উত্তপ্ত আঙিনায় চোখ রাখলেই দেখা যায় বাংলাদেশের দাপট বিচরণ। নানা কারণে দ্বিধাবিভক্ত জাতির কাছে ক্রিকেটই যেনো জীবনের মূল প্রতিচ্ছবি। তিন অক্ষরের ছোট শব্দটাই যেনো ধারণ করে এই জাতির অস্তিত্ব। একটু কি বেশি বলা হলো?
হতে পারে। কিন্তু মিথ্যে তো নয়! বলা যেতে পারে ক্রিকেটই গোটা জাতির নিউক্লিয়াস!

বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুরুটা রকিবুল হাসান, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও গোলাম ফারুকদের হাত ধরে। নব্বইয়ের আগে পরে পথচলা শুরু আকরাম খান, নাঈমুর রহমান দূর্জয়, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আতাহার আলী খান ও হাবিবুল বাশারদের। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একসঙ্গে খেলেছেন তারা। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের মানুষকে মাতিয়েছেন ম্যাচ জয়ের গৌরব-আনন্দে। ৯৭-এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ৯৯-এর বিশ্বকাপ ও ২০০০ সালের প্রথম টেস্ট; এ সবের আবেগি ইতিহাসে তাদেরই বিচরণ। কালের বিবর্তনে তারা নিজেদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন উত্তরসূরীদের।

একবিংশ শতাব্দীতে পা রেখে বাংলাদেশ পেলো এক ঝাঁক নতুন নায়কের সন্ধান। ধূমকেতু হয়ে তাদের আগমণ। কিন্তু ধূমকেতুর মতো মুহূর্তেই হারিয়ে যাননি তারা। বরং দিনে দিনে নিজেদের ধ্রুবতারার মতো প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজেদের মেধা-মননের মশাল প্রজ্জ্বলন করে মুশফিক, সাকিব, তামিম ও মাহমুদউল্লাহরা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে করেছেন আলোকিত। তাদের সবার ‘গুরু’ মাশরাফি বিন মুর্তজা এখনও দাপটের সঙ্গে খেলে যাচ্ছেন। যার আবির্ভাব ১৬ বছর আগে। গতিময় পেস আর যাদুকরী বোলিংয়ে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ বাংলাদেশকে চিনিয়েছেন বিশ্বদরবারে। আছেন মোহাম্মদ আশরাফুলও। ফিক্সিংয়ের অন্ধকারে পা না রাখলে হয়তো দেশের শীর্ষ ক্রিকেট তারকাদের মধ্যে তার নাম সবার উপরে থাকত! এখনও যে নেই তা বলা যাবে না। টেস্ট অভিষেকে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি করার বিশ্বরেকর্ডটা তার। কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়া বধের রূপকারও তিনিই। তাদের পরে এসে সাকিব আল হাসান বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার হয়েছেন। টেস্ট ও ওয়ানডের পাশাপাশি ক্রিকেটের নতুন সংস্করণ টি-টোয়েন্টিতেও বিশ্বসেরা ‘বাংলার জান, বাংলার প্রাণ’ সাকিব আল হাসান।

 

এক ফ্রেমে বাংলাদেশের আগামী দিনের ক্রিকেট-প্রতিভা



তামিম ইকবাল ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ব্যক্তিগত অর্জনও কম নেই। টেস্ট ক্রিকেটে দেশের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরিয়ান তিনি। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ক্রিকেটের জন্মস্থানখ্যাত লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন। মুশফিকুর রহিম ইতিহাসের দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে পরপর দুটি সেঞ্চুরি। মাশরাফির নেতৃত্বে তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরাই বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে গেছেন। তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের পতাকা উড়ছে অনেক সম্ভাবনার বাতাসে। কিন্তু তাদের উত্তরসূরী কারা?

মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব-তামিমদের পর কারা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেবেন? ক্রিকেটপাগল অনেকের মনেই এই প্রশ্ন। প্রায় এক দশক ধরে খেলছেন মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিমরা। তাদের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের সৌম্য সরকার, কাজী নুরুল হাসান সোহান, সাব্বির রহমানরা যোগ দিয়েছেন। আবিষ্কৃৃত হয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমানও। অভিষেকের এক বছরের মধ্যেই বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন রত্নে পরিণত হয়েছেন তিনি। অথচ তার অবয়বে এখনো কৈশরের ছাপ স্পষ্ট। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী এক দশকে মুস্তাফিজ হয়ে উঠবেন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হয়ে উঠবে মুস্তাফিজ!

পাইপলাইনে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ ২০১৬ যুব বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়েছে, সেরা অলরাউন্ডারের খেতাব পেয়েছেন তিনি। ব্যাটিং-বোলিংয়ে সমান পারদর্শিতা দেখিয়ে মিরাজ যেন ভবিষ্যত ‘সাকিব আল হাসান’। তবে তাঁর স্বপ্ন সাকিবকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার। ব্যাট হাতে দারুণ প্রতিভাবান মিরাজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু নাজমুল হোসেন শান্ত। সাকিব-তামিম যেমন ঠিক তেমনই মিরাজ-শান্ত। যুব ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, বয়সভিত্তিক দলের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান নিশ্চিতভাবেই আগামী প্রজন্মের সবচেয়ে বড় তারকার একজন। দীর্ঘমেয়াদী চিন্তায় বিশ্বাসী শান্ত কখনোই বর্তমান সাফল্যে উচ্ছ্বসিত নন বরং বর্তমান তার কাছে কেবলই প্রেরণার উৎস।

আল-আমিন জুনিয়রের নামও আসতে হবে। ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান স্পিনে অ্যাটাকের বিপক্ষে দারুণ পটু। পেস বোলিংয়ে ঘঁষামাজা করতে পারলে ভবিষ্যতের সম্পদ হয়ে উঠবে ঢাকার লিগের এই ব্যাটসম্যান। আছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া এ ক্রিকেটার দারুণ প্রতিভাবান। ‘এ’ দলের হয়ে খেলছেন। জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে খেলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। পেস অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে কান পাতলেই শোনা যায় পেস-বোলিং অলরাউন্ডারের জন্য হাহাকার। সাইফউদ্দিন সেই হাহাকারের সমাপ্তির নাম হয়ে উঠতে পারেন, অনেকেই দেখছেন সেই স্বপ্ন। বড় শট এবং ঝড়ো গতির কার্যকর পেস, এই দুই মিলে সাইফউদ্দিন সত্যিই অপার সম্ভাবনাময় এক নাম।

উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে জাকির হাসান রয়েছেন। শুধু ব্যাটিং না ঠান্ডা মাথার জাকির হাসান উইকেটের পিছনেও দুরন্ত। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে ব্যাটিং করা, রান নেওয়া, শট খেলা সবকিছুতেই রয়েছে আভিজাত্যের ছাপ। স্পিন বোলিংয়ে প্রতিভাবান সালেহ আহমেদ শাওন ও সঞ্জীত সাহা। সঞ্জীতের বোলিং অ্যাকশন সাময়িক নিষিদ্ধ। অ্যাকশন শুধরে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারলে সঞ্জীত হয়ে উঠবেন বাংলাদেশের স্পিন যাদুকর। স্থানীয় কোচদের ভাষ্যমতে, জাতীয় দলকে অনেক কিছুই দিতে পারবেন সঞ্জীত। পেস বোলিংয়ের নতুন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথে মুস্তাফিজুর রহমান। সবে শুরু হয়েছে তার যাত্রা। তার ভবিষ্যতের সঙ্গী আবু হায়দার রনি, আব্দুল হালিম, মেহেদী হাসান রানারা।

তাঁদের নিয়ে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। এই অমিত প্রতিভাবানরাই বয়ে চলবেন সাকিব-তামিমদের ঝান্ডা। বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করবেন তারা। বারবার পুরো জাতি একাত্ম হবে ক্রিকেটের গানে। একদিন বিশ্বজয়ের স্বপ্নটাও হয়ে যাবে মধুর বাস্তবতা! ব্যাট-বলের যুদ্ধে জয়ী হবে বারবার, একাধিকবার, প্রত্যেকবার! যাদের হাতে আলোর মশাল, এমন ভাবনার সাহস যুগিয়ে দিচ্ছেন তারাই।



 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুন ২০১৬/এএন/আমিনুল/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়