ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রাচীন বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজ সিলেট সেরা

রফিকুল ইসলাম কামাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ১৯ মে ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাচীন বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজ সিলেট সেরা

রফিকুল ইসলাম কামাল, সিলেট : চারদিকে সবুজের সমারোহ। ১২৪ একরের ছায়া-সুনিবিড় বিশাল ক্যাম্পাস। প্রকৃতির কোলেই যেন গড়ে উঠেছে এমসি কলেজ। ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ এই এমসি কলেজ এখন সিলেট সেরা।

 

দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর র‌্যাঙ্কিং করা হয়েছে। এ র‌্যাঙ্কিংয়ে সিলেট অঞ্চলের মধ্যে সেরা কলেজের মর্যাদা পেয়েছে এমসি কলেজ।

 

কলেজের এ সাফল্যের নেপথ্যে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি কঠোর নজরদারি, শিক্ষকদের আন্তরিকতা, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, সহশিক্ষা কার্যক্রমে আলোকপাত- এ সবকিছুই ছিল বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

 

এ ব্যাপারে আলাপ হয় এমসি কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দের সঙ্গে।

 

কলেজটির সাফল্যের পেছনের কারণ কী, এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের পাড়শোনার প্রতি কঠোরভাবে নজরদারি করেছি। শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনার উন্নত পরিবেশ পায়, সে ব্যবস্থা করেছি। কলেজে ২০টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিষয়ে দেখভাল করার জন্য মনিটরিং কমিটি রয়েছে।’

 

তিনি বলেন, শিক্ষকদের আরো বেশি দক্ষ ও পারদর্শী করে তুলতে আমরা ইনহাউজ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাও করে থাকি।

 

অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ আরো বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও মাস্টার্স কারিকুলামের প্রতি বিশেষ নজরদারি রয়েছে আমাদের। ফলে কলেজের প্রতি ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রতি পরীক্ষায় অনেকগুলো ফার্স্ট ক্লাস আসে।

 

এমসি কলেজ অধ্যক্ষ জানান, বর্তমানে কলেজে চারটি অনুষদে ১৬টি বিভাগ চালু রয়েছে। অনুষদগুলোর মধ্যে রয়েছে- কলা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ।

 

৯টি একাডেমিক ভবনে চলছে এমসি কলেজের কার্যক্রম। এ কলেজে রয়েছে দেশের অন্যতম প্রাচীন লাইব্রেরি। কলেজের এই কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সঙ্গে সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পৃথক সেমিনার লাইব্রেরি। সব মিলিয়ে এমসি কলেজের লাইব্রেরিতে প্রায় ৭০ হাজার বই রয়েছে।

 

সহশিক্ষা কার্যক্রমের প্রতি জোরালো অবস্থান রয়েছে এমসি কলেজের। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের দিন সিলেটের বৃহৎ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে এমসি কলেজে। কলেজে থিয়েটার মুরারিচাঁদ, মোহনা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, ডিবেটিং ক্লাব, ম্যাথ ক্লাব, ট্যুরিস্ট ক্লাব, ধ্রুবক ক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রয়েছে রোভার স্কাউট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের কার্যক্রমও।

 

অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে যেমন এমসি কলেজে অগ্রগামী, তেমনি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও কলেজের সরব পদচারণা রয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতিমনা করে গড়ে তোলা হয় এখানে।

 

এমসি কলেজের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কোনো বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে কিনা, এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ৩১টি সূচকের ভিত্তিতে কলেজের র‌্যাঙ্কিং করেছে। এই ৩১টি সূচকের যেগুলোতে এমসি কলেজ পিছিয়ে রয়েছে, সেগুলোতে সামনে এগুনোর ব্যাপারে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করছি। ইতিমধ্যেই কলেজের বার্ষিক ম্যাগাজিন আগামী জুনের মধ্যে প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

 

 

এমসি কলেজ ১৮৯২ সালের ২৭ জুন তৎকালীন সিলেটের প্রখ্যাত শিক্ষানুরাগী গিরিশ চন্দ্র রায়ের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়। তার প্রমাতামহ মুরারি চাঁদের নামেই কলেজটির নামকরণ করা হয়। বৃহত্তর আসাম প্রদেশের প্রথম কলেজ ছিল এটি। প্রতিষ্ঠাকালে সিলেটের বন্দরবাজারে রাজা জি সি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে (তৎকালীন গোবিন্দ পার্কের কাছে) ছিল এমসি কলেজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলেজের সব ব্যয়ভার বহন করতেন গিরিশ চন্দ্র। তবে ১৯০৮ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর কলেজটি সরকারি অনুদানে পরিচালিত হতে থাকে। ১৯১২ সালে এমসি কলেজ পূর্ণাঙ্গ সরকারি কলেজরূপে আত্মপ্রকাশ করে।

 

পরবর্তীতে তৎকালীন বিশিষ্ট নেতা খান বাহাদুর সৈয়দ আবদুল মজিদের (কাপ্তান মিয়া) প্রচেষ্টায় কলেজে ¯œাতক শ্রেণি চালু হয়। নানা সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে এমসি কলেজকে ১৯২১ সালে সিলেটের টিলাগড়ে ১২৪ একর ভূমিতে স্থানান্তর করা হয়। এক্ষেত্রে তৎকালীন আসাম প্রাদেশিক আইন পরিষদের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দারুণ ভূমিকা রাখেন সৈয়দ আবদুল মজিদ। দেশ ভাগের পূর্ব পর্যন্ত, তথা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এমসি কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলত। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে আসে এমসি কলেজ। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তার অধীনে চলে যায় এমসি কলেজ। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এমসি কলেজ তার অধিভুক্ত হয়।

 

এমসি কলেজের সঙ্গে বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বের নাম জড়িয়ে আছে। এ কলেজেই পড়াশোনা করেছেন বিখ্যাত ঐতিহাসিক নীহার রঞ্জন রায়, পদার্থবিজ্ঞানী মোহাম্মদ আতাউল করিম, মুক্তিযোদ্ধা ও বাম রাজনীতিবিদ আবু তাহের, বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য এম এ রশীদ প্রমুখ ব্যক্তিত্ব।

 

রাইজিংবিডি/সিলেট/১৯ মে ২০১৬/রফিকুল ইসলাম কামাল/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়