ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বালিশ কাণ্ড : ৩৬ কোটি টাকার গরমিল

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫০, ১৫ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বালিশ কাণ্ড : ৩৬ কোটি টাকার গরমিল

মেহেদী হাসান ডালিম : পাবনার রূপপূর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য বিছানা, বালিশ ও আসবাবপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে ক্রয় দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

হিসাবে মালামালের প্রকৃত মূল্য অপেক্ষা ৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা বেশি দেখানো হয়েছে। এই টাকা সরকারের কোষাগারে ফিরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

এ ঘটনায় গঠিত গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে এক হাজার পৃষ্ঠার অধিক এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

আগামী ২১ জুলাই বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সরওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪টি ভবনে আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম সরবরাহ কাজের চুক্তি মূল্য একশ ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। অথচ মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে ৭৭ কোটি ২২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ চুক্তি মূল্য সরবরাহ করা মালামালের প্রকৃত মৃল্যের চেয়ে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা বেশি। এই বাড়তি পরিশোধিত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে প্রকৌশলী মাসুদ আলমসহ প্রায় ৫০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বিভাগীয় গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাক্কলন প্রস্তুত বা প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতরা হলেন- পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তাহাজ্জুদ হোসেন, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক, উপসহকারী প্রকৌশলী আহম্মেদ সাজ্জাদ খান, মো. রুবেল হোসাইন, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. ফজলে হক, সুমন কুমার নন্দী, মো. রফিকুজ্জামান, মো. জাহিদুল কবীর, মো. শাহীন উদ্দিন, মো. আবু সাঈদ ও মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রাক্কলন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সুপারিশের সঙ্গে জড়িতরা হলেন- রাজশাহী সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম জিল্লুর রহমান, পাবনা সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র সাহা, পাবনা জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. রকিবুল ইসলাম, মোরশেদা ইয়াছবির, খন্দকার মো. আহসানুল হক, সুমন কুমার নন্দী ও মো. রওশন আলী।

প্রাক্কলন যাচাই-বাছাই ও অনুমোদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা হলেন- রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নজিবর রহমান ও মো. শফিকুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিনা শারমিন, মো. নুরুল ইসলাম (এলপিআর), মো. আশরাফুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী মো. মকলেছুর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী শাহনাজ আকতার ও মো. আলমগীর হোসেন।

বিল প্রদানের সঙ্গে সম্পৃক্তরা হলেন- পাবনা জোনের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শফিউজ্জামান, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল কবীর, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রওশন আলী, মো. রফিকুজ্জামান, মো. শফিকুল ইসলাম, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তাহাজ্জুদ হোসেন, আহম্মেদ সাজ্জাদ খান ও নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম।

বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনুমোদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা হলেন- পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, রাজশাহী সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম জিল্লুর রহমান, পাবনা সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র সাহা, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নজিবর রহমান ও মো. শফিকুর রহমান ও প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম (পিআরএল)।

দরপত্র প্রণয়ন, মূল্যায়ন ও অনুমোদনের সঙ্গে সম্পৃক্তরা হলেন- পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নজিবর রহমান ও মো. শফিকুর রহমান, পাবনা জোনের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তাহাজ্জুদ হোসেন, রাজশাহী সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম জিল্লুর রহমান, পাবনা সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র সাহা ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম (পিআরএল)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে উল্লেখিত ব্যক্তিরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

এর আগে ১৯ মে পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রীনসিটি আবাসন পল্লীর বিছানা, বালিশ, আসবাবপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে কেনা ও তা ভবনে তোলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জনস্বার্থে এই রিট আবেদনটি করেন।

রিট শুনানির এক পর্যায়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং একইসঙ্গে এই ঘটনায় গঠিত গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুলাই ২০১৯/মেহেদী/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়