ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বর ও কনের সাজ

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ৯ জানুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বর ও কনের সাজ

মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হলো বিয়ের দিনটি। বর-কনে দুইজনের-ই চাওয়া এই দিনটাতে সুন্দর লাগুক নিজেকে। বিশেষ করে কনের। সব নারীই চান এই দিনটিতে তাকে যেন সবচাইতে সুন্দর দেখায়।

এর জন্য বেশ আগে থেকেই চলে প্রস্তুতি। প্রথমেই আসা যাক বিয়ের শাড়ীতে। বিয়ের শাড়ীতে কিংবা পোশাক সম্ভারে লাল, সোনালি, কমলা, গোলাপি- এই ধাঁচের রঙগুলোর উপস্থিতি দেখা যায় বেশি। লাল, খয়েরি শ্রেণির রঙগুলো কনের শাড়িতে আধিপত্য বিস্তার করছে বহুকাল ধরেই। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে যোগ হয়েছে কমলা, গোলাপি, ম্যাজেন্টা।

তবে ট্র্যাডিশনাল কনেসাজ বাদ দিয়ে কিছুটা ভিন্ন আবহে নিজেকে সাজিয়ে তোলার প্রবণতা দেখা যায় পানচিনি, বউভাত, বধূবরণে। এ সময় রঙের বৈচিত্র্য দেখা যায় সদ্যপরিণীতার পোশাকে। লাল, খয়েরি, গোলাপি থেকে বেরিয়ে এসে কনে সেজে নেন সবুজ, বেগুনি, রয়েল পার্পল, কচি কলা পাতার মতো উজ্জ্বল আর বৈচিত্র্যময় রঙে।

আজকাল অনেকেই আবার গাউন কিংবা লেহেঙ্গা, ঘাগরা পরে বিয়ের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন, যেখানে সাদা থেকে শুরু করে সব রঙের ব্যবহার লক্ষণীয়। এমনটি শুধু পোশাকেই নয়, কনের সাজসজ্জা, গয়না, হাতের পার্স থেকে শুরু করে জুতা পর্যন্ত সবকিছুতেই। কনের বিয়ের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মেকআপ চাই। আর ব্যাগ, জুতা যদি খুব বেশি কনট্রাস্ট রঙের হয়ে থাকে, তবে তা মানানসই হবে না।

কনে সাজ যেহেতু প্রত্যেক নারীর জীবনের প্রত্যাশিত স্বপ্ন। তাই বিয়ের সাজে বিশেষত্ব থাকা চাই। বিয়ের সাজে কনের চোখ বা ঠোঁট সুন্দর করে সাজানো যেতে পারে। চাইলে চুলের ভিন্নতায় বিশেষ পরিবর্তনও আনা যেতে পারে। সুন্দর হাসি আর সেই সঙ্গে সুন্দর সাজ সব মিলিয়ে কনে অপূর্ব হয়ে ফুটে উঠবে। তবে চাইলে এই সৌন্দর্যকে সাধারণ সাজের আদলে আরো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভারি মেকআপের দিকে খেয়াল না রাখাই ভালো।

বিয়ের সাজে কনের কাপড়ের ধরনটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই শাড়ি দেখেই কনের বিয়ের সাজের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। আবার কনের পেশা বা পছন্দের ওপর নির্ভর করে স্পেশাল লুক আনা সম্ভব হয়। বিয়ের সাজের তিনটি অনুষ্ঠানকে মাথায় রেখেই সাজে পরিবর্তন আসে। গায়ে হলুদ, বিয়ে ও বউভাতের সাজকে তিনটি ট্রেন্ডি, ফিউশন ও ট্র্যাডিশনে ভাগ করা হয়েছে। কনের একেক অনুষ্ঠানে একেক লুক দিতেই সাজে এই ভিন্নতা। তিনটি লুকের মধ্যে ট্র্যাডিশন লুকে চোখের ওপর বেশি কাজ করা হয়। ঠোঁট গাঢ় লাল করা হয়। চুল ফুলিয়ে ট্র্র্যাডিশনাল করা হয়।

আর মডার্ন লুকে কনের সাজে স্মোকি ভাব ফুটিয়ে তোলা হয়। যা এ সময়ের কনেদের বেশ পছন্দের। এ সময়ের কনেরা বিয়ের সাজে ট্র্যাডিশনাল লুককে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।

কনের ফিউশন সাজে যাদের চোখ ছোট তাদের চোখের শেপে পরিবর্তন আনা হয়। চোখ বড় করিয়ে দেখানো হয়। তাই দেখতেও ভালো দেখায়। এই সাজে ঠোঁটের সাজকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মুখের বিভিন্ন অংশে মেকআপ ফুটিয়ে তুলতেই এই সাজটি বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

মডার্ন ব্রাইডাল লুকে নিজেকে বধু সাজে সাজাতে ফেসের শার্পনেস বের করে আনা যায়। এ সাজে সাজতে হলে ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কনসিলার লাগান চোখের নিচে, মুখের কালো দাগ বা ব্রণে। ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ফাউন্ডেশন দিন সারা মুখে। এক শেড হালকা রঙের ফাউন্ডেশন দিন গালে, কপালের মাঝে, থুতনি ও নাকের ওপরের অংশে। ডার্ক কালারড ফাউন্ডেশন দিয়ে কন্টোরিং করুন চিকবোন, নাকের দু’পাশ ও গালের যে কোনো ফোলা অংশ। গালে লাগান ব্রাউন ব্লাশন।

প্রথমেই আইব্রো প্লাক করে নিন। ব্রাইডাল সাজে শার্পনেস আনতে এ কাজটি অবশ্যই করতে হবে। আইব্রো পেন্সিল দিয়ে সূক্ষরেখায় আইব্রো আঁকুন। গ্রে ও ব্যাক শ্যাডো লাগান। আইব্রোর ঠিক নিচে হাইলাইট করুন গোল্ডেন আইশ্যাডো বা হাইলাইটার দিয়ে। রেড আইশ্যাডো দিয়ে রাঙিয়ে নিন চোখের ওপরের পাতা। ব্যাক শ্যাডো দিন চোখের ভাঁজে ও বাইরের কোনায়। চোখের ভেতরের কোনায় সিলভার আইশ্যাডো দিন। কালো লিকুইড আইলাইনার দিয়ে মোটা রেখায় চোখ আঁকুন। নিচের পাতায় মোটা রেখায় কাজল লাগান। ঘন করে মাশকারা লাগান চোখের পাপড়িতে। ব্রাইডাল লুকে লিপ প্রমিনেন্ট করতে রেড লিপলাইনার দিয়ে লিপ আঁকুন। এরপর রেড লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট দুটোকে ভরুন।

তবে সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে নিজের রুচি এবং ব্যক্তিত্যের ক্ষেত্রে। পোশাকের ফেব্রিক, রঙ ও গহনা নির্বাচনে সচেতন থাকুন। অন্য কাউকে এই রঙ বা ধরনের পোশাক ভালো লেগেছে বলেই যে আপনাকেও ভালো লাগবে এমন কোনো কথা নেই। তাই চেষ্টা করুন আপনাকে মানায় এমন ফেব্রিকের ও রঙের পোশাক ও গহনা পরতে। নিজের সৌন্দর্য পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলতে ব্যক্তিত্ব, পরিবেশ-পরিস্থিতি ও নিজের বা প্রিয়জনের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে পারেন। তবে সাজের ক্ষেত্রে ত্বকের স্কিনটোনের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সাজে নিজস্ব কোনো পছন্দ থাকলে তা বিউটিশিয়ানকে ভালো করেই বুঝিয়ে দিতে হবে।

কনের সাজসজ্জা তো হলো-ই, এবার আসা যাক বরের সাজসজ্জায়। বরের পোশাক নিয়ে মাতামাতি যেমন কিছুটা কম, তেমনি রঙের বৈচিত্র্যও তাতে কম। সাদা, সোনালি কিংবা রুপালি শেরওয়ানি, তার উপর লাল, খয়েরি জরির সুতার কাজ- এটুকুই চোখে পড়ে বরের সাজপোশাকে। এখনকার বরেরা আবার কনের শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গার সঙ্গে মিল রেখে নিজের পোশাক বাছাই করেন। তা হতে পারে কনের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে রঙ কিংবা কনট্রাস্ট কোনো কালার। আর বিয়ে ছাড়া অন্য অনুষ্ঠানগুলোতে ফরমাল ফুলহাতা শার্ট, স্যুট। এতেও রঙের ব্যবহার সীমিতই বলা চলে। প্রে-ইন কিংবা স্ট্রাইপ ডিজাইনের ফুলহাতা শার্ট হতে পারে হালকা ও উজ্জ্বল কোনো রঙের। হালকা নীল, বেবি পিঙ্ক, সাদা ইত্যাদি আর সেই সঙ্গে গাঢ় রঙের মানানসই স্যুটেই বরকে মানায়। তবে এসবের সঙ্গে ঘড়ি আর জুতা মানানসই হতে হয়।

বিয়ের সপ্তাহখানেক আগেই ত্বকের বিশেষ যত্ন নেয়া শুরু করতে হবে। হাত পায়ের ওয়াক্সিং, ফেসিয়াল, চুলের ট্রিটমেন্ট আগেই করে ফেলা উচিত। নয়তো বিয়ের আগে একসঙ্গে সব কাজ করতে গেলে এগুলো আপনার গোটা সাজকেই মাটি করে দিতে পারে। বিয়ের ঠিক এক বা দু দিন আগে ভ্রু প্লাক করতে হবে। বিয়ের দিন সাজার সময় ভ্রু প্লাক করতে গেলে সেখানে দ্রুত মেকআপ করার সময় ভ্রুর জায়গাটিতে যন্ত্রণা, চুলকানি, লাল হয়ে যাবার মত সমস্যা হতে পারে। যা আপনার সুন্দর সাজগোজকে মাটি করে দিতে পারে।

আপনি যদি চোখের রঙ পরিবর্তনের জন্যে অন্য কনট্যাক্ট লেন্স পরতে চান, তাহলে তা মেকআপ করার আগেই পরে ফেলুন। কেননা, কনট্যাক্ট লেন্স পরার সময় চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি পড়তে পারে, যা আপনার চোখের মেকআপ এর ক্ষতি করতে পারে।

নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি ফাস্টফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস, ভাজাভুজি ও মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন। প্রচুর ফল ও সবজি খান ও মেডিটেশন করুন। বিয়ের অনুষ্ঠানের আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাবার চেষ্টা করুন। এতে আপনার ত্বকে ব্রণ বা অন্য কোনো সমস্যা হবার সম্ভাবনা কমে যাবে এবং মেকআপ ত্বকে খুব সুন্দরভাবে বসবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ জানুয়ারি ২০১৬/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়