ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুককে অব্যাহতি

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ২০ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুককে অব্যাহতি

ওমর ফারুক চৌধুরীকে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে রাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা জানান।

যুবলীগের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো চেয়ারম্যানকে তার দায়িত্বের মাঝপথে অব্যাহতি দেয়া ঘটনা ঘটলো। সম্প্রতি দুর্নীতির দায়ে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন-গোলাম রব্বানীকে সরিয়ে দেয়ার পর এবার যুবলীগের চেয়ারম্যানের ভাগ্যেও একই পরিণতি হলো।

এরই মধ্যে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা ও বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে যাওয়ার অনুমতিও হারিয়েছেন।

সম্প্রতি ক্যাসিনো ব্যবসার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান এবং তাতে যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর থলের বেড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এই সময়ে গ্রেপ্তার হন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও যুবলীগ নেতা পরিচয় দেয়া জি কে শামীমসহ অনেকে। তাদের গ্রেপ্তার পর ওমর ফারুক চৌধুরী ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ পেতে শুরু করে। এরপর থেকেই নিজেকে কিছুটা আড়ালে নিয়ে যান এই নেতা।

যুবলীগের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, যুবলীগে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তার। তার কথাতেই কমিটি হতো, তার কথাতেই কমিটি ভাঙতো। কেউ পদ পেতো তার ইশারায়। কেউ পদও হারাতো ওই তারই ইশারায়। সংগঠনের যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির থাকলেও সব সিদ্ধান্ত নিতেন তিনিই।

জানা গেছে, রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে আসতে ওমর ফারুককে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। রাজনীতিতে অনেক কাঠখড় পোড়ানো ওমর ফারুককে যুবলীগের চেয়ারম্যান পদ তাকে নিয়ে গেছে প্রভাবশালীদের কাতারে। এক সময় বিড়ির কাচামাল তামাকের বিকল্প ‘টেন্ডু পাতা’র ব্যবসা করেছেন। ধীরে ধীরে যুক্ত হয়েছেন পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ও। এক সময় বিড়ি শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন, পরে আওয়ামী লীগ হয়ে এসেছেন যুবলীগে। রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে না পারলেও যুবলীগ তাকে সেই অবস্থান দিয়েছে।

ওমর ফারুক চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৮ সালে। সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম জেলা বিড়ি শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ সময় মিয়ানমার থেকে টেন্ডু পাতা (তামাকের বিকল্প কাঁচামাল) আমদানি শুরু করেন তিনি। আশির দশকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে দলটির অঙ্গ সংগঠন যুব সংহতির রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৯৯৭ সালে কোষাধ্যক্ষ হন। ২০০৩ সালে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন । এর আগের কমিটিতে কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আর ২০১২ সালে হন চেয়ারম্যান।

এরশাদ সরকারের সময় থেকে ওমর ফারুকের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। ওই সময় থেকে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি একাধিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সবকিছুকে ছাড়িয়ে যেতে থাকেন তিনি। যুবলীগে গড়ে তোলেন নিজের প্রভাবশালী বলয়। ওমর ফারুকের ইচ্ছেমতোই চলছিল সব।

যুবলীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, যুবলীগে বিভিন্ন কমিটি গঠন ও পদ দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন ওমর ফারুক। টাকা নিয়ে পদ দিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাকে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন তিনি যুবলীগে। তিনিই পিয়ন থেকে দপ্তর সম্পাদক পদ দেন আলোচিত কাজী আনিসকে। এ নিয়ে সংগঠনের ক্ষোভ থাকলেও ওমর ফারুকের একচ্ছত্র আধিপত্যে এই বিষয় নিয়ে কেউ মুখ খুলতেন না।

ক্যাসিনো কাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযান চলার প্রথম কয়েকদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতি থাকলেও ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেন ওমর ফারুক চৌধুরী। সংগঠনের সপ্তম কংগ্রেস উপলক্ষে দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের উৎসবমুলক পরিবেশ থাকলেও তাকে দেখা যায়নি।




ঢাকা/পারভেজ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়