রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের শুনানি আজ
বাংলাদেশের অভাবনীয় কূটনৈতিক তৎপরতায় এরই মধ্যে বিশ্বাঙ্গণে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবস্থান তৈরি করা গেছে। শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক আদালতে গড়াল। জাতিসংঘের ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজে’ (আইসিজে) স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার এ শুনানি শুরু হচ্ছে।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলাটির শুনানি হবে নেদারলেন্ডের রাজধানী হেগেতে। চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে সময়ের ব্যবধানের কারণে বাংলাদেশে এই শুনানী সময়কাল হবে ১১ ও ১২ ডিসেম্বর।
বাদী গাম্বিয়া এবং বিবাদী মিয়ানমার উভয়েই আইনজীবী নিয়োগ করেছে। দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলও হেগে পৌঁছেছে।
বিশ্ববাসীর নজর থাকবে এই আন্তর্জাতিক আদালতের শুনানির ওপর।শুনানী পর্যবেক্ষণ করবে বাংলাদেশও। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দল দেশটিতে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এবার আন্তর্জাতিক আদালত থেকে বিষয়টি সমাধানে একটি যৌক্তিক দিকনির্দেশনা আসতে পারে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া গত ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলাটি দায়ের করে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে রাখাইনে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ করা হয়েছে ওই মামলায়।
আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলা শুনানির জন্য বাংলাদেশ সময় ১১ ও ১২ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম দিনে শুনানিতে অংশ নেবে গাম্বিয়া আর দ্বিতীয় দিনে মিয়ানমার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ল’ ফার্ম ফলি হককে গাম্বিয়া আইনজীবী নিযুক্ত করেছে। এই ফার্মটি মিয়ানমার ও ভারতের বিপক্ষে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেছে। গাম্বিয়ার পক্ষে এই ফার্মের প্রধান আইনজীবী পায়াম আখাবানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
আইসিজেতে মিয়ানমারের বিপক্ষে দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশ সরাসরি কোনো পক্ষ নয়। তবে গাম্বিয়ার পক্ষে এ ব্যাপারে লজিস্টিক সহায়তা দেবে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে নেদারল্যান্ডসের হেগে গেছেন।
তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। জাতিসংঘে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ কারণে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে তাকেই হেগে পাঠানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানিকে সামনে রেখে সীমান্তে মিয়ানমার অংশে নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে তোড়জোড় লক্ষ্য করা গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আদালতে তিন দিনের শুনানিতে জাতিসংঘ নিযুক্ত ১৬ জন বিচারক প্যানেল উভয়পক্ষের আইনজীবীদের প্রশ্ন করবেন। আদালত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় পরিপূর্ণ শুনানির আগে অন্তর্বর্তী আদেশ দিতে পারেন।
রোম চুক্তিতে যেসব দেশ সই করেছে, সাধারণত ওই দেশগুলোর কেউ গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করলে অপরাধী ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিসহ সাজা দিতে পারে আইসিসি।
বাংলাদেশ রোম চুক্তিতে সই করলেও মিয়ানমার এতে সই করেনি। আইসিসিতে এ কারণে বিচারে কিছুটা অসুবিধা থাকলেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সুপারিশ করলে আইসিসি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংগঠিত অপরাধের বিচার করতে পারে।
ঢাকা/হাসান/নাসিম
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন