ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শতবর্ষী আনন্দ মোহন কলেজ আজও খ্যাতির শিখরে

শেখ মহিউদ্দিন আহাম্মদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২২, ২৪ মে ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শতবর্ষী আনন্দ মোহন কলেজ আজও খ্যাতির শিখরে

আনন্দ মোহন কলেজের অভ্যন্তর

শেখ মহিউদ্দিন আহাম্মদ, ময়মনসিংহ : আনন্দ মোহন কলেজ- বৃহত্তর ময়মনসিংহের অক্স্রফোর্ড নামে যার খ্যাতি। সেই খ্যাতি আজও ধরে রেখেছে ময়মনসিংহের এই কলেজটি। এবার ঢাকা-ময়মনসিংহ অঞ্চলের সেরা ১০ কলেজের মধ্যে নিজের অবস্থান ধরে রেখে র‌্যাংকিংয়ে ৭ম স্থান অর্জন করেছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কলেজগুলোর মধ্যে আনন্দ মোহন কলেজ অন্যতম একটি।

২০টি বিষয়ে অনার্সসহ মাষ্টার্স কোর্সে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। ২০০৮ সালে কলেজটি শতবর্ষ অতিক্রম করেছে। কলেজটির রয়েছে নানান গৌরবময় ঐতিহ্য ও বর্ণাঢ্য ইতিহাস। এ প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছেন দেশের অনেক বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। ১৯২৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এ কলেজে এসেছিলেন।

বর্তমানে দাবী উঠেছে আনন্দ মোহন কলেজটিকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরের।

রাজনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক ব্যারিষ্টার আনন্দ মোহন বসুর পৈত্রিক ভিটায় ১৮৮৩ সালের ১ জানুয়ারি ‘ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশন’ নামে এর যাত্রা শুরু হয়। ১৮৯০ সালের এপ্রিল মাসে নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় ‘ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুল’। ১৯০৮ সালে নামকরণ হয় ‘ময়মনসিংহ কলেজ’।

আনন্দ মোহন কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জাকির হোসেন


ময়মনসিংহ জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মৌলভী হামিদউদ্দিন আহমদ কলেজের নামে ২৬ বিঘা জমি দান করেন এবং তার বন্ধু আনন্দ মোহন বসুর নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। আনন্দ মোহন বসুর পৈত্রিক ভিটাতে চালু করা কলেজটি ১৯০৮ সালেই কাচিঝুলিতে স্থানান্তরিত হয়ে নামকরণ হয় ‘আনন্দ মোহন কলেজ’।

১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯০৯ সালে এ কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। আনন্দ মোহন কলেজটি ৩৯ বছর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত ছিল। ১৯১৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আনন্দ মোহন কলেজকে প্রথম গ্রেডের কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। প্রতিষ্ঠাকালে আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্র ছিল মাত্র ১৭৮ জন ও শিক্ষক ছিলেন ৯ জন। ১৯৬৪ সালে সরকারীকরণ করা হয়। বতর্মানে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ৩২ হাজার, শিক্ষক ২০৭ জন ও কর্মচারী ১৫০ জন।

১৯০৯ সালে শ্রী বৈকুন্ঠ কিশোর চক্রবর্তী এ কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। বর্তমানে প্রফেসর মো. জাকির হোসেন অধ্যক্ষর দায়িত্ব পালন করছেন।

জাকির হোসেন জানান, কলেজের ঐতিহ্যবাহী বিশাল ভবনের পাশাপাশি ৩টি ছাত্রবাস, ২টি ছাত্রী নিবাস রয়েছে। আরো ২টি ছাত্রাবাস নির্মাণাধীন। রয়েছে সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি। প্রতিটি বিভাগে রয়েছে বিষয়ভিত্তিক আলাদা সেমিনার-লাইব্রেরি। কলেজে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট কার্যক্রমের পাশাপাশি খেলাধূলা, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা, বির্তক প্রতিযোগিতা চালু রয়েছে। কলেজটিতে বর্তমানে ১৫.২৮ একর জমি রয়েছে।

আনন্দ মোহন কলেজের সম্মুখভাগ


ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করেছেন, স্বাধীন বাংলার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, মানবতাবাদী ড. নীহার রঞ্জন রায়, কথা সাহিত্যিক রাহাত খান, অধ্যাপক যতীন সরকার, কবি নির্মলেন্দু গুণ, কবি হেলাল হাফিজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এম মোফখাখারুল ইসলাম, বর্তমান সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম,  ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এমপি, প্রাক্তণ ভূমি মন্ত্রী মোঃ রেজাউল করিম হীরা, প্রাক্তণ তথ্য মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, প্রাক্তণ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মরহুম ডাঃ ক্যাপ্টেন অবঃ মুজিবুর রহমান ফকির, প্রাক্তণ জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, প্রাক্তণ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এম আমানউল্লাহ এমপি, এডভোকট মোঃ মোসলেম উদ্দিন এমপি, মোশতাক আহমেদ রুহী এমপি, প্রাক্তণ এমপি কে এম খালিদ বাবু ও অধ্যক্ষ আমির আহাম্মদ চৌধূরী রতনসহ অনেক বরেণ্যজন।

আনন্দ মোহন কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি জানিয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জাকির হোসেন বলেন, আবাসন সংকট সমাধান করা, হাজার হাজার ছাত্র/ছাত্রীর পরিবহন সংকট সমাধান করা, আলাদা প্রশাসনিক ভবন করা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে।


রাইজিংবিডি/ময়মনসিংহ/২৪ মে ২০১৬/মহিউদ্দিন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়