ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প

বাগেরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১  
সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ও ষাটগম্বুজ অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প এলাকা। দেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে দুটির অবস্থান বাগেরহাট জেলায়। একটি প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সুন্দরবন অপরটি মধ্যযুগের মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শণ ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ।

দীর্ঘদিনেও বাগেরহাটে দর্শনার্থী বান্ধব প্রয়োজনীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা গড়ে ওঠেনি। নানা সংকট থাকা স্বত্তেও দুই বিশ্ব ঐতিহ্যেকে ঘিরে আগ্রহের কমতি নেই দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের। স্থানীয়দের দাবি জেলাকে পর্যটন বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক হোটেল-মোটেল গড়ে তুলতে হবে।  

খুলনার একটি ট্যুর অপারেটরের ট্যুরিস্ট গাইড হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাগেরহাট আসলে একটি সম্ভাবনাময় জেলা। এখানে একদিকে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য, অপরদিকে প্রায় সাড়ে ৬০০ বছর আগে নির্মিত ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ। মুসলিম স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন।

তিনি আরো বলেন, সুন্দরবন দেখতে ও ষাটগম্বুজ মসজিদের ইতিহাস জানতে সব বয়সী দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম লেগেই থাকে। তবে এসব স্থাপনা দেখতে এসে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় দর্শনার্থীদের। নেই কোনো মানসম্মত খাবার হোটেল ও থাকার ব্যবস্থা। এছাড়া নেই কোনো ট্যুরিস্ট গাইড। যাতায়াত ব্যবস্থাও নাজুক। যার ফলে এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা খুবই কম।

ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, শুধু ষাটগম্বুজ নয়, বাগেরহাটে দেখারমত অনেক স্থাপনা রয়েছে। এগুলোকে মানুষের কাছে পরিচিত করতে আমাদের আরও কাজ করা প্রয়োজন। তবে দীর্ঘ দিনেও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আবাসন সুবিধা গড়ে না ওঠায় বাগেরহাটে দর্শনার্থীদের আগ্রহ খুবই কম। সংকটের সঙ্গে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে দাবি করে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, পদ্মা সেতু এবং বাগেরহাট বিমান বন্দর চালু হলে এই এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। সেই সঙ্গে অবকাঠামোরও উন্নয়ন হবে। তখন বাগেরহাটের পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। এই এলাকায় ট্যুরিস্ট গাইডও তৈরি হবে।

“ষাটগম্বুজ-সুন্দরবন ট্যুরিজম” নামের ট্যুর অপারেটরের পরিচালক মীর ফজলে সাঈদ ডাবলু বলেন, বাগেরহাটে অনেক পর্যটন স্পট থাকলেও সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। এই এলাকাকে পর্যটন বান্ধব করতে  আশপাশের সব শ্রেণির মানুষকে প্রশিক্ষন প্রদান করতে হবে। পর্যটকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। ষাটগম্বুজ, খানজাহান আলী (রহ) মাজার, মোংলাসহ যেসব স্থানের রেষ্টুরেন্টে পর্যটকরা খাবার খায় সেসব রেষ্টুরেন্টের কর্মচারীদেরকেও প্রশিক্ষন প্রদানের দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাটে পযটকদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিতের জন্য সদর উপজেলার খানজাহান আলী (রহ) এর মাজার মোড়ে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল নির্মানাধীন থাকলেও সময়মত কাজ শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ২০১৯ সালের জুনে শুরু হওয়া সাত তলা এই ভবনের কাজ ২০২১ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এতোদিনে মাত্র ৬০ শতাংশ কাজ হয়েছে ভবনটির। এছাড়াও কয়েকমাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। ৩৩ শতকের বেশি জমির উপরে নির্মিত ৭ তলা এই ভবনে ৩০টি কক্ষ, ৫০ আসন বিশিষ্ট রেষ্ট্রুরেন্ট, অফিস রুম, অভ্যার্থ্যণা কক্ষ, বারবি কিউ রুম ও গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে। পুরো ভবনের আয়তন হবে ২ হাজার ৭৬০ বর্গমিটার। খাজা রাব্বি বিলকিস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ করছেন।

বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ জানান, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে দর্শনার্থীদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে যেমন দর্শনার্থী সংখ্যা বাড়বে তেমন রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, করোনাকালীন সময়ের মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থ বছরে সুন্দরবনে ৮৩ হাজার ৫৩৯ জন দেশী এবং ২৯৯ জন বিদেশী পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৬৭ লক্ষ ৭ হাজার ৪৭৬ টাকা। সুন্দরবনকে পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলতে সুন্দরবনের আলীবান্ধা ও আন্ধারমানিক দুটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাটকে পর্যটনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার নানা উদ্যেগ নিয়েছে। পর্যটন কর্পোরেশনের অর্থায়নে তিন তারকা মানের হোটেল ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া ষাটগম্বুজের সামনের বিশ্রামাগার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ সংলগ্ন ঘোড়াদিঘিকে নান্দনিক করতে ওয়াক ওয়ে তৈরি করা হয়েছে।

টুটুল/মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়