গাজীপুরের শ্রীপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুমন বাহিনীর পাঁচটি টর্চার সেল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার বরমী ইউনিয়নের পাঠানটেক, নড়নল, কোষাদিয়া, নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের ওই টর্চার সেলগুলোতে অভিযান চালায় পুলিশ। আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় অস্ত্র।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, “সুমনের কয়েকটি টর্চার সেলে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান চলাকালে একটি বন্দুকসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।”
আরো পড়ুন: দফায় দফায় হামলা চালিয়ে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনতাই
এলাকাবাসী জানান, টর্চার সেলগুলোতে রাতভর চলতো মাদকের আড্ডা। নিরাপরাধ মানুষকে সেখানে ধরে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন, আদায় করা হতো মুক্তিপণ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পাঠানটেক গ্রামের টিনশেড ঘরের টর্চার সেলে ছিল কাঠের ফার্নিচার, চেয়ার-টেবিল ও বাঁশ। বড়নল গ্রামের বাঁশতলা এলাকার টর্চার সেলে একটি চৌকি, তোষক এবং বাঁধার জন্য ব্যবহৃত রশি পাওয়া গেছে। কোণের দিকে ছিল বাঁশের লাঠি ও লোহার পাইপ। একই গ্রামের আরেক টিনশেড ঘরে রাতভর বসতো মাদকের আড্ডা। সেখানে খাট ও খাবারের প্যাকেট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল।
সুমন
কাওরাইদ ইউনিয়নের ত্রিমোহনী ব্রিজের নিচে কলাবাগানে ও বরমী বাজারের কাঠ মহলেও টর্চার সেলের অস্তিত্ব মিলেছে। স্থানীয়রা জানায়, এখানে অসংখ্য মানুষকে নির্যাতন করা হয়েছে।
বরকুল গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক সুরুজ মিয়া বলেন, “২০২২ সালে সুমন বাহিনীর সদস্য রাসেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমাকে দোষারোপ করা হয়। এরপর আমাকে তুলে নিয়ে টর্চার সেলে হাত বাঁধা হয় লোহার রডে। বারবার অজ্ঞান হওয়ার পরও নির্যাতন চলতে থাকে। শেষে ১ লাখ টাকা দাবি করে তারা। প্রাণ বাঁচাতে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পাই। এক সপ্তাহ পর্যন্ত হাঁটতে পারিনি।”
মোক্তার হোসেন জানান, ২০২৪ সালে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে বাঁশতলা এলাকার সেলে নেওয়া হয়। হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের পর টাকা দাবি করা হয়। তার স্ত্রী পুলিশকে খবর নেন। পুলিশ আসার আগেই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
আসাদুজ্জামান বলেন, “সামান্য জামিনের টাকার কারণে আমাকে কলেজের পাশে সুমন বাহিনীর ঘরে তুলে নিয়ে যায়। হাত-পা বেঁধে পেটানো হয়। পরে টাকা দিলে মুক্তি পাই।”
স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, “সুমনরা পাঁচ ভাই। বড় ভাই খোকন শেখ নিয়ন্ত্রণ করতেন বরমী বাজার ও পরিবহন স্ট্যান্ড। রোকন শেখ ছিলেন মাদকের গডফাদার। সুমন শেখ নিজে গড়ে তোলেন বাহিনী। রাজিব ও রাসেল দুই ভাই আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতেন। তারা জিম্মি করে অর্থ আদায়, বালু মহাল ও ইটভাটা দখলসহ এলাকায় ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে।”
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, “সুমন শেখদের কয়েকটি টর্চার সেলের তথ্য পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো য়েছে। একটি বন্দুকসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।”