আইন ও অপরাধ

সেফুদার সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো হেলেনার: র‌্যাব

আলোচিত-সমালোচিত সেফুদার সঙ্গে আওয়ামী লীগের পদ হারানো নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের যোগাযোগ ছিলো। তাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত কথাও হতো। সেফুদা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নাতি বলেও সম্বোধন করতেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: হেলেনার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা হচ্ছে: র‌্যাব

শুক্রবার (৩০ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় র‍্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ছবি তুলে হেলেনা তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে খ্যাতনামা হিসেবে উপস্থাপনও করতেন তিনি। চতুরতার আশ্রয়ও গ্রহণ করতেন। উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তিনি একটি সংঘবদ্ধচক্র তৈরি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ফেসবুক লাইভে এসে অযাচিত কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন সম্মানিত ব্যক্তিদের কটাক্ষ ও উত্তপ্ত করতেন হেলেনা। পরবর্তীতে ফোন করে ওসব সম্মানিত ব্যক্তিদের হেয়  করেছেন। প্রবাসী ও আলোচিত সেফুদা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল বক্তব্যের মাধ্যমে দেশবাসীর নজর কাড়তে চেষ্টা করেন।  তার সাথে হেলেনার যোগাযোগ আমরা দেখেছি। হেলেনা জাহাঙ্গীর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে সেফুদার সঙ্গে। 

আরও পড়ুন: ‘ভাইয়ার মদের লাইসেন্স আছে, হরিণের চামড়া বিয়েতে উপহার’

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর আমাদের জানান তিনি অপকৌশলের মাধ্যমে নিজেকে মাদার তেরেসা হিসেবে পরিচিতি পেতে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।  তার পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘবদ্ধচক্র অপপ্রচার চালাতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থায় জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের অর্থ সংগ্রহ করতেন।  ১২টি ক্লাবের সদস্য পদ রয়েছে হেলেনার।  আর অভিযানের ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-৪ এবং বিটিআরসির সহযোগিতায় রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টেলিভিশন সিলগালা করা হয় এবং অবৈধ মালামাল জব্দ করা হয়েছে।  উক্ত টেলিভিশনে বিভিন্ন কর্মী ও সাংবাদিক নিয়োগের মাধ্যমে তিনি চাঁদাবাজি করতেন বলে বিভিন্নভাবে আমরা জানতে পেরেছি। তিনি টিভির ব্যানারে দেশের বিভিন্ন জেলায় লোক নিয়োগ দিয়ে বেতন দেওয়ার পরিবর্তে নিজেই মাসিক মাসোহারা নিতেন। 

আরও পড়ুন: জয়যাত্রা টিভির বৈধ কাগজপত্র নেই: র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট

সাংবাদিকদের প্রশ্নে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আমরা তার বাসায় বিভিন্ন ধরনের বন্য প্রাণী হরিণ, ক্যাঙ্গারুর চামড়া, মাদক পেয়েছি।  বিপণ্ন প্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। যেহেতু তার বাসায় ওয়াকিটকি পাওয়া গেছে, এ কারণে  বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হবে। তার বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনেও মামলা হবে। মিরপুরে টেলিভিশন চ্যানেল জয়যাত্রায় অভিযান পরিচালনা করেছি। সেখানে টেলিভিশনের স্যাটেলাইট সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।  যা অবৈধ বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি।  টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিটিআরসি।  এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন জায়গায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল কনটেন্ট পেয়েছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা প্রক্রিয়াধীন।

আরও পড়ুন: যা পাওয়া গেল হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায়

অপর প্রশ্নে কমান্ডার মইন বলেন, টিভি চ্যানেলে আমরা যখন অভিযান পরিচালনা করেছি তখন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কর্মকর্তাও ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকতা শুরু করেন হেলেনা।  তবে তিনি এটির যাত্রা করেন অবৈধ চাঁদা আদায়ের জন্য। তার টিভিতে যোগদান করতে হলে কারও কারও কাছ থেকে ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নেন। এভাবে কেউ প্রতারণার শিকার হয়ে থাকলে তাকে র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

আরও পড়ুন: হেলেনা জাহাঙ্গীর আটক

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  প্রায় ৪ ঘণ্টা ভেতরে অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র‌্যাব।  এ সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, বৈদেশিক মুদ্রা, হরিণ ক্যাঙ্গারুর চামড়া উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন: ‘ভাইয়ার মদের লাইসেন্স আছে, হরিণের চামড়া বিয়েতে উপহার’