জাতীয়

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরামর্শ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক : একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে যথাযথ পরিবেশ তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। বুধবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ পরামর্শ দেন তারা। বৈঠকে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন (ইসির তালিকার ক্রমানুসারে)-নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবির, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশিস সৈকত, কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব ওমর ফারুক, বিএফইউজের অপর অংশের মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, আমানুল্লাহ কবীর, সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মর্তুজা, বিভুরঞ্জন সরকার, মাহবুব কামাল, সোহরাব হাসান, দৈনিক সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, যায়যায়দিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাজী রুকুনউদ্দীন আহমেদ, কাজী সিরাজ ও আনিস আলমগীর। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে কমিশনকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির বিষয়েও আমরা মতামত দিয়েছি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান জানান, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। সেসঙ্গে নামসর্বস্ব পর্যবেক্ষক সংস্থাকে যেনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেওয়া হয়। আর জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সমর্থন করছি না। বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, অনেকে মত দিয়েছেন যে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। আর অনেকে বলেছেন এখন যেভাবে মোতায়েন করা হয় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে তারা থাকতে পারে। এ ছাড়া কেউ কেউ বলেছেনে ‘নো’ ভোট না থাকা ভালো, কেউ কেউ বলেছেন নো ভোট থাকতে পারে। নির্বাচন একটা রাজনৈতিক উৎসব। সব দলের অংশগ্রহণ যেন নিশ্চিত করা যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে বলেও জানান তিনি। ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, এবারের নির্বাচনের দিকে সবাই তাকিয়ে রয়েছে। আর নির্বাচনের পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের জন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ইসির স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। এমন আচরণ করতে হবে যাতে জনগণের আস্থা তৈরি হয়। আস্থা অর্জনে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। সামনে সিটি নির্বাচনের ওপরই জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে আস্থা তৈরির পথ প্রশস্ত হবে। ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশিস সৈকত বলেন, বিদ্যমান সীমানাতেই ভোট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জনসংখ্যার ভিত্তিতেই সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। ২০১১ সালে সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদন হওয়ায় নতুন করে আর সীমানা পুনর্নির্ধারণের দরকার নেই। সি​নিয়র সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর জানান, এখন থেকেই সবার জন্যে সমান সুযোগ তৈরি করতে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ইভিএম নিয়ে সব দলের সঙ্গে আলোচনার পর সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দল যাতে নিবন্ধন না পায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াত যাতে অন্য কোনো নামে বা অন্য কোনো ফরম্যাটে ভোট করতে না পারে সে বিষয়ে আইনি উদ্যোগ নিতে হবে। ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বেলা আড়াই টায় সংলাপের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের কাছ থেকে যেসব সুপারিশ দেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরেন। সুপারিশগুলো হচ্ছে- ১. সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রত্যাশা ২. বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ করার পরামর্শ ৩. সেনা মোতায়েনের পক্ষে বলেছেন কেউ কেউ; অধিকাংশই বলেছেন সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে ৪. না ভোটের পক্ষে-বিপক্ষে মত; কেউ ভালো বলেছেন, কেউ কেউ না ভোটের বিপক্ষে বলেছেন ৫. দেশ-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ৬. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাংলায় করার পরামর্শ ৭. জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার পরামর্শ ৮. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি ৯. আচরণবিধি প্রয়োগে কঠোর হওয়ার পরামর্শ ১০. প্রবাসীদের ভোটার ও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা ১১. নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ১২. ধর্মকে কোনোভাবে যাতে ভোটের প্রচারে ব্যবহার করতে না পারে ১৩. অবৈধ অর্থ ও পেশি শক্তির ব্যবহার রোধ ১৪. প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ ও প্রচারের উদ্যোগী হতে হবে ১৫. নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ১৬. ইসিকে দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে ১৭. অনলাইনে মনোনয়ন নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে ১৮. লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে ১৯. ভোটার ও প্রার্থীর আস্থা তৈরি করতে হবে ২০. নারী ভোটার উপস্থিতি ও নারী নেতৃত্বের অগ্রগতি ধরে রাখতে ভূমিকা নিতে হবে। হেলালুদ্দীন আহমদ আরো বলেন, এ সংলাপে ২৬ জন উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার অনলাইন, টিভিও রেডিওর সঙ্গে বসবে ইসি। পর্যায়ক্রমে সবার সঙ্গে বসে সব সুপারিশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। এ সংলাপের মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথ প্রশস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি। আরো পড়ুন :

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ আগস্ট ২০১৭/হাসিবুল/হাসান/সাইফ