জাতীয়

ফরিদ ও বাদশার পরিবারে কান্না থামছেই না

পরিবারের জন্য চিংড়ি মাছ কিনতে এসে বাসচাপায় প্রাণ যায় ফরিদের। প্রিয়জনের সঙ্গে আর খাওয়া হলো না স্বাদের চিংড়ি।  অন্যদিকে বাদশা মিয়া মাল নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় একই বাসের নিচে চাপা পড়েন। মুহূর্তেই থেমে যায় তার জীবনের প্রদীপ। তার মৃত্যুতে অন্ধকার নেমে এসেছে পরিবারে।  অসহায় দুই মেয়েকে নিয়ে স্ত্রীর আহাজারি যেন থামছে না।

আরও পড়ুন: হালকা লাইসেন্স নিয়ে ভারী যান চালাচ্ছিলেন রাকিব

শনিবার (৮ জানুয়ারি) সকালে মেঘলা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। এ সময় শেখ ফরিদ এবং মো. বাদশা মিয়া মারা যান।  আহত হন আরও কয়েকজন।

এ ঘটনায় শেখ ফরিদের ভাই মো. শাকিল ওইদিনই সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৮ ও ১০৫ ধারায় ওয়ারী থানায় একটি মামলা করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৮ জানুয়ারি সকাল ৭টার দিকে শেখ ফরিদ চিংড়ি মাছ কেনার জন্য কাপ্তান বাজারের উদ্দেশ্যে বের হন।  আর বাদশা মিয়া যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানে মাল ডেলিভারি দেওয়ার জন্য রওনা হন। সকাল সাড়ে ৯টার সময় ওয়ারী থানাধীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারস্থ টোল প্লাজার ৪০ মিটার পূর্বদিক তারা পায়ে হেঁটে নামার সময় যাত্রাবাড়ী থেকে আসা মেঘলা পরিবহনের একটি বাস ফরিদ ও বাদশার ওপর উঠিয়ে দেয়।  এতে তারা গুরুতর জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এছাড়া ওই গাড়ির আঘাতে ওমর শরিফসহ কয়েকজন আহত হন।

রোববার মামলার এজাহার আদালতে পাঠানো হয়। ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন মামলাটি তদন্ত করে ৭ ফেব্রুয়ারি ওয়ারী থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) রাজীব চন্দ্র সরকারকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

এদিকে, মামলার পর ওয়ারী এলাকা থেকে মেঘলা পরিবহনের চালক মো. রাকিব শরীফকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।  রোববার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হানিফ ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনাকবলিত মেঘলা পরিবহনের চালক মো. রাকিব শরীফের হালকা পরিবহন চালানোর লাইসেন্স আছে। কিন্তু ভারী পরিবহন চালানোর লাইসেন্স ছিল না। বাসটির অতিরিক্ত গতি থাকায় ফ্লাইওভার থেকে নামতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) রাজীব চন্দ্র সরকার বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি স্বীকার করেছে গাড়ির ব্রেক ফেল করায় এ ঘটনা ঘটেছে।’

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাদশা মিয়ার বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাত ৮টার সময় ছেলের লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি বগুড়া সদরের চারমাথায়।  সেখানে রোববার সকাল ৯টায় দাফন হয়। 

তিনি বলেন, ‘নুরজাহান মার্কেটে বাদশা কাটিং ফিটিং এর কাজ করতো। ও যে ইনকাম করতো তা দিয়ে দুই মেয়ে নিয়ে ভালোই ছিল।  ওদের এখন কি হবে? কেমনে চলবে? আমি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করি। ইনকাম তেমন না। এ দিয়ে কেমনে চলবো। আল্লাহ জানেন কি হবে ওদের। তবে যার কারণে এ ঘটনা ঘটছে তার যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়।’