খেলাধুলা

ছবিতে কিংবদন্তি পেলের জীবন

তিনবার বিশ্বকাপ জিততে পারেননি আর কেউ। পেলের এই কীর্তি আর কে ছুঁবেন, এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আর পাওয়া যাবে না। তার গোলসংখ্যাও অবিশ্বাস্য, ১৩৬৩ ম্যাচে ১২৮১টি। ফুটবলের রাজা বলা হয় তাকে। 

কত শব্দ আর বিশেষণ যে তৈরি করা যায় পেলেকে নিয়ে, তার হিসাব নেই। শুধু ফুটবল কেন, সাহিত্যিক জগতেও তাকে নিয়ে মুগ্ধতার শেষ নেই। ব্রাজিলিয়ান কবি কার্লোস ড্রুমন্ড দে আন্দ্রাদে বলেছেন, ‘পেলের মতো হাজার হাজার গোল করা কঠিন, অসাধারণ নয়। কঠিন হলো পেলে যেভাবে গোলগুলো তৈরি করেছে।’

সর্বকালের সেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব আর নেই। ৮২ বছর বয়সে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। প্রায় দেড় বছর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধে হার মেনেছেন তিনি। কিন্তু তার কিংবদন্তিতুল্য জীবন সবার হৃদয়ে অমলিন হয়ে থাকবে। কিছু ছবিতে ফিরে দেখা যাক এই কিংবদন্তির জীবন-

তরুণ পেলে, ১৯৫৮ সালের ছবি। ১৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন বিশ্বকাপ।

সুইডেনে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে ভক্তদের সঙ্গে ছবি তোলেন পেলে। ওইবারই ব্রাজিল তাদের পাঁচ বিশ্বকাপের প্রথমটি জেতে।

১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপের জুলে রিমে ট্রফির দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে পেলে। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের শুরুর বছর। ওইবার ছয় গোল করে ব্রাজিলকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দেন।

চিলিতে ১৯৬২ বিশ্বকাপে পেলের শেষ অ্যাকশনের মুহূর্ত। চেকস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে তার গোলমুখে নেওয়া শটের পর ঊরুর পেশি ছিঁড়ে যায়। গ্রুপ পর্বের ওই ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়, কিন্তু ব্রাজিল ফাইনালে চেকদের ৩-১ গোলে হারায়।

১৯৬২ বিশ্বকাপে পেলের ইনজুরির পর গারিঞ্চার (বাঁয়ে) কাঁধে চড়ে ব্রাজিল তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে। ছোট পাখি খ্যাত গারিঞ্চা বিশ্বকাপে সেরা ড্রিবলার হিসেবে নিজেকে চেনান।

পেলের লাফিয়ে পড়ার ক্ষমতা ছিল দারুণ। তার প্রমাণ এই ছবি। গোলকিপারের হাতের নাগালের উপরে লাফিয়ে ছিলেন তিনি। ১৯৬৩ সালে পর্তুগালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে, যদিও ম্যাচটি ১-০ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল।

ওভারহেড বাইসাইকেল কিক পেলের। তার এই আইকনিক ছবি পরের প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে যথেষ্ট। রিওর বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে ১৯৬৫ সালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে চোখ ধাঁধানো শট নেন পেলে। তার হ্যাটট্রিকে ম্যাচটি ৫-০ গোলে জেতে সেলেসাওরা।

পেলের সঙ্গে কে না দেখা করতে চায়? ১৯৬৫ সালে রিও ডি জেনেইরোতে ম্যাচ শেষে বিশ্বখ্যাত পেলের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ হাতছাড়া করেননি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রবার্ট কেনেডি।

১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ডে সেবার ব্রাজিলের ভালো সময় যায়নি। প্রথম ম্যাচে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে জয়ের পর ব্রাজিল পর্তুগাল ও হাঙ্গেরির কাছে হেরে গ্রুপ পর্বে বিদায় নেয়। বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ওই টুর্নামেন্টে নিজের একমাত্র গোল করেন পেলে।

১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ জয়। পেলে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে জিতলেন তিনটি বিশ্বকাপ ট্রফি। তাকে কাঁধে নিয়ে উদযাপনে মেতেছিল ব্রাজিলিয়ানরা। এই উদযাপনের ছবি যেন ব্রাজিলের সুন্দর ফুটবলের প্রতীক।

পেলে শুধু ব্রাজিলের সুপারস্টার নয়। ১৬ বছর খেলেছেন সান্তোসে। ১৯৬৯ সালের ১৯ নভেম্বর মারাকানায় শততম গোল করে ভক্তরা তাকে কাঁধে নিয়ে মাঠ ছাড়ে।

পেলে গিটারও বাজাতেন। ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে হোটেলের সুইমিংপুলের পাশে সঙ্গীতের মূর্ছনায় হারিয়ে যান পেলে। ওইবার নিজের সেরা বিশ্বকাপ খেলেন এবং জেতেন তৃতীয় ট্রফি।

১৯৭৪ সালের ১৮ অক্টোবর, সান্তোসের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে মাঠে নামেন পেলে। এই ক্লাবে তার ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৫৬ সালে।

যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলের পুনর্জন্ম হয়েছিল পেলের হাত ধরে। তিনি যোগ দিয়েছিলেন উত্তর আমেরিকান সকার লিগের ক্লাব নিউ ইয়র্ক কসমসে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জায়ান্টস স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষে ভক্তরা তাকে ঘিরে ধরেন।

দুই সেরার সাক্ষাৎ। ১৯৭৭ সালের ১ অক্টোবর, জায়ান্টস স্টেডিয়ামে কসমসের হয়ে পেলের শেষ ম্যাচ। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ফুটবল বক্সিংয়ের চেয়ে অনেক সুন্দর। কিন্তু আমি তোমার চেয়ে অনেক সুদর্শন।’

মুকুট মাথায় রাজা, ১৯৭৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মেক্সিকোর ক্লাব আমেরিকা তাকে এভাবে সম্মান জানায়।

১৯৮০ সালে ‘ভিক্টরি’সিনেমার সেটে পেলে। নাৎসিদখলকৃত ফ্রান্সে জার্মানদের বিপক্ষে একটি ম্যাচের পর যুদ্ধবন্দিদের পালানোর ওপর নির্মিত জন হাস্টন পরিচালিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই সিনেমায় দেখা গিয়েছিল পেলেকে। সিলভার স্ট্যালন ও মাইকেল কেইন ছিলেন মূল দুটি চরিত্রে।

মিলানের গিউসেপ্পে মেয়াজ্জা স্টেডিয়ামে ৫০তম জন্মদিন উদযাপন করেন পেলে। ১৯৯০ সালের ৩১ অক্টোবর একটি প্রদর্শনী ম্যাচও হয়েছিল।

২০০০ সালের ১১ ডিসেম্বর এক জমকালো আয়োজনে শতবর্ষের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন পেলেন, তার হাতে ফিফা তুলে দেওয়া হয় গ্র্যান্ড প্রিক্স অ্যাওয়ার্ড। 

জোহানেসবার্গে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকান প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে হাত মেলান পেলে। ম্যান্ডেলার বয়স ছিল তখন ৮৯ বছর এবং তার সম্মানে কেপটাউনে আয়োজিত হয় ‘ম্যান্ডেলার জন্য ৯০ মিনিট’ ম্যাচ।

২০১০ সালের ১ আগস্ট ফ্ল্যাশিং মিডোসের করোনা পার্কে নিউ ইয়র্ক কসমসের ফেরার দিন উৎসব হয়েছিল পেলেকে নিয়ে।

২০১৪ সালে ২৫ এপ্রিল ব্রাজিলের সান্তোসে একটি ফটো শুটে পেলে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে তার বিখ্যাত উদযাপন নতুন করে তুলে ধরলেন।