সারা বাংলা

ভ্যাক্সিনের অভাবে মারা যাচ্ছে সাপে কাটা মানুষ

ঠাকুরগাঁওয়ের হাসপাতালগুলোতে ভ্যাকসিন না থাকায় চিকিৎসার অভাবেই মারা যাচ্ছেন বিষধর সাপে কাটা রোগীরা। চলতি জুলাই মাসেই এ জেলায় সাপের কামড়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দ্রুততম সময়ে সাপের ভ্যাক্সিন সরবরাহ করা না গেলে আগামীতে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মে মাসে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে সাপের কামড়ে গুরুতর আহত এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভ্যাক্সিন না থাকায় চিকিৎসার অভাবেই মারা যান। এই ঘটনায় রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ হলে দ্রুততম সময়ে ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করে সদর হাসপাতাল। তবে সেই ঘটনার পরও জেলার অন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়নি বা তারাও কেনেনি। ফল স্বরূপ চিকিৎসার অভাবেই প্রাণ যাচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকায় সাপের কামড়ে আহত নারী-পুরুষদের।

আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ৪ মাস সাপের বিষের ভ্যাকসিন নেই

গত রোববার (৯ জুলাই) হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নের রাজা দিঘী গ্রামের মৃত খেলদার চন্দ্রের স্ত্রী প্রমিলা রাণী (৪৭) ও রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ধুমপুকুর গ্রামের চাপোয়া রাম (৪০) সাপের কামড়ে প্রাণ হারান। 

মারা যাওয়াদের পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, সীমান্তবর্তী এই দুই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কাটার ভ্যাকসিন না থাকায় মৃত্যু হয়েছে তাদের স্বজনদের।

হরিপুর গেদুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, উপজেলা হাসপাতালে সাপে কাটা  চিকিৎসার ভ্যাকসিন না থাকায় সাধারণ মানুষজন রোগীদের ওঝার কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধার সুযোগ পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। চিকিৎসার অভাবেই মারা যাচ্ছেন অনেকেই।

বালিয়ডাঙ্গী উপজেলার সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রায় ৮ মাস এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো সাপা কাটা ভ্যাকসিন (অ্যান্টি ভেনম) নেই। অথচ কৃষিপ্রধান এই এলাকায় শস্যখেতে অনেকেই সাপের কামড়ে আহত হচ্ছেন। বর্ষাকালে এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। তবুও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো কেন গুরুত্বপূর্ণ এই ভ্যাক্সিন সরবরাহ হয় না তা বোধগম্য হচ্ছে না। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে এই চিকিৎসা ব্যবস্থার পেছনে। কিন্ত তা কোনো কাজেই আসছে না সাধারণ মানুষের।

ভ্যাকসিন সংকট থাকার কথা স্বীকার করে ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের হাসপাতালে সাপের বিষের ভ্যাকসিন না থাকার বিষয়টা আমি অবগত আছি। আমি একাধিকবার ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচালকদের তাগাদা দিয়েছি। তারা যদি ভ্যাকসিন না কেনেন তাহলে এর দায়ভার তাদের।’  

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে ভ্যাকসিনের সংকট বেশি থাকায় সরকার সেদিকে সব ভ্যাকসিন সরবরাহ করছে। তবে নিজ উদ্যোগে ঠাকুরগাঁওয়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো কেন ভ্যাকসিন কিনছে না তা আমার বোধগম্য নয়। কারণ সরকার তাদের টাকা দিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় কাজে সেটা ব্যবহারের ক্ষমতাও দিয়েছে।’