সারা বাংলা

সীমান্ত হত্যা: লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তে গুলিতে মারা যাওয়া ৩ ব্যক্তির লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ। নিহত এসব ব্যক্তিদের মরদেহ ফিরে পাবার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজনরা। বিজিবি জানিয়েছে, নিহত একজনের লাশ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। বাকি দুই জনের তথ্য নেই তাদের কাছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তে হত্যার শিকার জন তিন জন। এদের মধ্যে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। উপজেলার উজিপুর-বাবুপুরের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী বাবলু হককে বিএসএফ হত্যা করে চলতি বছরের ২৩ আগস্ট। আজমতপুরের ইব্রাহিমকে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর ও দুর্লভপুরের শামীম রেজা ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর হত্যার শিকার হন। 

স্বজন ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, সীমান্তে হত্যার পর মরদেহ ফেরত পেতে বিজিবিসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন তারা। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। 

গত ২২ মাস ধরে পাঁচ বছর বসয়ী জমজ ভাই-বোন ইজমা ও আরাফাত তাদের বাবা ইব্রাহিমের মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছে। ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের গুলিতে মারা যান ইব্রাহিম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আজমতপুর সীমান্তে মারা যায় ২৫ বছর বসয়ী এই যুবক। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার বাবুপুর মধ্যপাড়ার মৃত হোসেন আলীর ছেলে। 

পরিবারের সদস্যরা জানান, জেলার শিবগঞ্জের আজমতপুর সীমান্ত পিলার ১৮২/১ এলাকায় বিএসএফের গুলিতে মারা যান ইব্রাহিম। পরে বিএসএফের সদস্যরা তার মরদেহ নিয়ে যায়। দীর্ঘদিন পার হলেও এখন পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা মরদেহ ফিরে পাননি।

সন্তানকে শেষবারের মতো ছেলেকে দেখার আকুতি ছিল ইব্রাহিমের মা ফুরকুনি বেগমের কণ্ঠেও। ছেলের স্মৃতি চারণ করার সময় চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছিল তার। ফুরকুনি বেগম বলেন, ‌‘বিএসএফের গুলিতে মরে গেছে আমার ছেলে। টানাপোড়ন সংসারে দুটি জমজ সন্তান রেখে গেছে ইব্রাহিম। খুব কষ্টে দিন কাটছে তাদের। এ বাড়ি ও বাড়ির সাহায্য নিয়ে চলা সংসারে এভাবে যে টানা খুবই মুশকিল। অনেকদিন হলো ছেলে আমার মারা গেছে। না এলো তার লাশ, না এলো সরকারের সাহায্য। খুব কষ্টে দিন কাটছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছেলের জন্য কলিজা ছারখার হয়ে গেলো। ছেলেটার মরা মুখও দেখতে পেলাম না, বাবারে মাটি দিতে পারলাম না। সরকারের কাছে একটাই চাওয়া, তারা যেন ইব্রাহিমের মরদেহ ফেরত দেন। শেষবারের মতো যেন দেখতে পাই ছেলেটারে।’ 

এদিকে, সন্তানকে শেষবারের মতো দেখার জন্য অপেক্ষায় আছেন ৭৩ বছর বয়সী সাজেনুর বেগম। গত ২৩ আগস্ট তার সন্তান বাবলু হককে সীমান্তে গুলি করে হত্যার পর লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ। মানসিক প্রতিবন্ধী বাবলু হকের লাশ পেতেই দুই মাস ধরে মায়ের এই অপেক্ষা।

সাজেনুর বলেন, ‘বাবলুকে দেখবার মন হচ্ছে। কিন্তু পাচ্ছি কি, পাই না তো।’

বাবুলের পরিবার জানায়, জেলা চকপাড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মারা যান বাবুল। হত্যার পর তার লাশ নিয়ে চলে যায় বিএসএফ। মানসিক প্রতিবন্ধী ছিল বাবুল। প্রায়ই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যেতো। চোরাকারবারিভেবে বিএসএফ সদস্যদের বুলেটের আঘাতে নির্মম মৃত্যুর শিকার হয় বাবলু। 

শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, আমরা বাবুলের মরদেহ আনার জন্য তৎপরতা চালিয়েছি। বিজিবির ক্যাম্পেও গেছিলাম। আমাদের চেষ্টা কোনো কাজেই আসেনি। বাবলুর লাশটা পাওয়া উচিত। বিজিবি লাশটা ফেরত এনে দেবে বললেও এখনো দেয়নি।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, তিনটা ডেডবডি ইন্ডিয়ার মধ্যে আছে। যদি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা আমার কাছে আইনি সহযোগিতা চান আমি তাদের সহায়তা করবো। 

তিনি আরও বলেন, যেহেতু, বর্ডার কিলিংয়ের একটা বিষয় আছে। সে ক্ষেত্রে দুই দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ পতাকা বৈঠক করে ডেডবডিগুলো হস্তান্তর করে থাকে। আমি বিজিবির সিও’র সঙ্গে কথা বলে ডেডবডিগুলো আনার ব্যবস্থা করবো। অবশ্যই প্রতিটি পরিবার চাই ডেডববি তাদের কাছে ফেরত আসুক।

চাঁপাইনাবগঞ্জের ৫৯ বিজিবি ব্যাটানিয়নের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, বাবলু হকের লাশ ফেরত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাকি দুজনের ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে।