সারা বাংলা

দুই সন্তানকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যা, থানায় অপমৃত্যুর মামলা

ঋণের চাপে দুই শিশু সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যার ঘটনায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিহত সালমা বেগমের বড় ভাই নূর মোহাম্মদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। 

এদিকে, মারা যাওয়া সালমা বেগমসহ তার দুই শিশুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিরাজদিখানের কেয়াইন ইউনিয়নের উওর ইসলামপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়ে। সালমা বেগমের ভাই নূর মোহাম্মদ এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন: দুই সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর ফাঁস নিলেন মা

পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সালমা বেগম প্রায় এক ডজন এনজিও ও কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে ১২-১৪ লাখ টাকা ঋণ নেন। আট বছর আগে বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিও থেকে চার-পাঁচ লাখ টাকা ধার করে সৌদি আরবে যান মারা যাওয়া সালমা বেগমের স্বামী অলি উল্লাহ। তিনি প্রতি মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা পাঠাতেন। পাওনাদারের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আরেক এনজিও, এক ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আরেক ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করতে হতো সালমা বেগমকে। গত আট বছরে ঋণের চাপে অলি উল্লাহও দেশে আসতে পারছিলেন না। ঋণের টাকা নিয়ে প্রায়ই স্বামী অলি উল্লাহ’র সঙ্গে মুঠোফোনে ঝগড়া হতো সালমা বেগমের। গত শনিবার স্বামীর সঙ্গে সালমা বেগমের এ নিয়ে আবারো ঝগড়া হয়।

সিরাজদিখান উপজেলার উত্তর ইসলামপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা চানমালা, ফুলন নেসা, রোজিনা বেগমসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামটিতে ৭০টির মতো পরিবার বসবাস করে। তাদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। ওই গ্রামের ৯০ ভাগ পরিবারের কোনো না কোনো এনজিও অথবা সুদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ ঋণ নিয়েছেন। এসব অর্থ কেউ মাসিক, কেউ সাপ্তাহিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করছেন। সুদের টাকা পরিশোধ করতে গেলে আসল দেওয়া যায় না, আসল দিতে গেলে সুদ জোগাড় করা যায় না।

মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান রিফাত বলেন, ঋণের চাপে দুই শিশু সন্তানকে হত্যার পরে আত্মহত্যা করা মায়ের ময়নাতদন্ত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। সিরাজদিখান থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে বিস্তারিত বলতে পারব।