লাহোর টেস্ট শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডির প্রথম দিনের খেলা দেখে মনে হলো যেন সময় থেমে গেছে সেখানেই। একই রকম চিত্র- ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ নেয় ম্যাচের, স্কোরবোর্ডে জমে ৫ উইকেটে ২৫৯ রান। টস জিতে ব্যাটিং নেয়া পাকিস্তান আবারও প্রমাণ করল কঠিন পিচে ধৈর্য ধরে খেলাই তাদের মূল শক্তি।
রাওয়ালপিন্ডির উইকেটে এখনো তেমন স্পিন না ধরলেও বেশ ধীর। মাঝে মাঝে বল নিচু হচ্ছে। পুরনো বলে রিভার্স সুইংও পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের টপ ও মিডল অর্ডার ধীর গতিতে হলেও সামলে নিয়েছে ইনিংস। রানরেট ছিল তিনেরও নিচে। কিন্তু দিনে মাত্র পাঁচ উইকেট হারিয়ে শেষ করায় তারা নিশ্চয়ই খুশি।
অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা দিনের শেষে আফসোসে পুড়ছে। তারা চারটি সহজ ক্যাচ ফেলেছে- আব্দুল্লাহ শফিকের তিনবার (০, ১৫ ও ৪১ রানে) আর শান মাসুদের একবার (৭১ রানে)। তাছাড়া অন্তত সাতটি বল স্লিপ বা শর্ট লেগে পড়ে গেছে অল্পের জন্য। সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে পাকিস্তান হয়তো অনেক কঠিন অবস্থায় পড়ত।
পাকিস্তানের ইনিংসের ভিত গড়ে দ্বিতীয় উইকেটে শফিক ও মাসুদের ১১১ রানের জুটি। শান মাসুদ দলীয় সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেন। আর শফিক করেন ধৈর্যশীল ৫৭। সৌদ শাকিল দিনের শেষে অপরাজিত ৪২ রানে ক্রিজে আছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সবচেয়ে কার্যকর ছিলেন কেশব মহারাজ। প্রথম ওভারেই কাগিসো রাবাদার বলে শফিকের ক্যাচ ফেলেন ট্রিস্টান স্টাবস। এরপর রাবাদার বলেও দুবার ইমাম-উল-হক স্লিপের সামনে বল ফেলে দেন। বাঁহাতি মার্কো জানসেনের এক বল শফিকের স্টাম্প ছুঁয়ে গেলেও বেল পড়েনি। নিয়তির মতোই বেঁচে যান ওপেনার। এরপর কেশব মহারাজের হাতে শফিকের একটি রিটার্ন ক্যাচও হাতছাড়া হয়।
অবশেষে সাইমন হার্মার ভাঙলেন সেই জুটি। ইমামকে বোল্ড করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এনে দেন প্রথম উইকেট। তার পরের ওভারেই মাসুদের ক্যাচের অল্প সুযোগও মিস করে প্রোটিয়ারা।
প্রথম ১৬ ওভারে পাকিস্তানের রানরেট ছিল ঘণ্টায় ২.৫ এর মতো। এরপর মাসুদ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেন। হার্মারকে টানা দুই ওভারে দুটি ছক্কা হাঁকান। এরপর একই কাজ করেন সেনুরান মুথুসামির বিপক্ষেও।
দুপুরে লাঞ্চে যায় পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে ১ উইকেটে ৯৫ রান রেখে। এরপর ধীরে ধীরে এগোয় ইনিংস। শফিক আবারও একাধিক সুযোগ দেন। কিন্তু ক্যাচ ধরতে না পারায় বেঁচে যান বারবার। অবশেষে ১২০ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে তিনি ৫৭ রান করে আউট হন, হার্মারের বলে উইকেটকিপারের হাতে।
এরপর বাবর আজম নামতেই যেন মাঠে নতুন উদ্দীপনা। কভার ড্রাইভে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন। কিন্তু মাসুদের জীবনদান দক্ষিণ আফ্রিকার হতাশা বাড়ায়। বাবর মহারাজের বলে ক্যাচ দেন মুথুসামির কাছে, কিন্তু সেটিও হাতছাড়া হয়। এরপর মহারাজের এলবিডব্লিউ রিভিউও ব্যর্থ হয়। আল্ট্রা-এজে স্পষ্ট দেখা যায় ব্যাটে লেগেছিল।
অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এল এক ‘ম্যাজিক মুহূর্ত’। বাবর এবার মহারাজের বল রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। বলটা লাফিয়ে উঠে যায় সিলি মিড-অফে। সেখানে টনি ডি জর্জি অবিশ্বাস্য এক ডাইভ দিয়ে মাটি ছুঁয়ে ক্যাচ ধরেন। পাকিস্তান তখন ৩ উইকেটে ১৭৭।
বিকেলে জানসেন পুরনো বলে রিভার্স সুইং কাজে লাগিয়ে বিপদ তৈরি করেন। শান মাসুদ শতকের দিকেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু মহারাজকে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজে জানসেনের হাতে ধরা পড়েন।
শেষ দিকে শাকিল ও সালমান আলী আগা ধীরে ধীরে দলকে স্থিতিশীল করেন। রাবাদা নতুন বল তুলে নিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে এলবিডব্লিউ করে দিনের শেষ উইকেট নেন। ৯১ ওভারের দিন শেষে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ২৫৯।