প্রতিবন্ধী মেহেরুন নেছার জন্য শুরু হয়েছে ঘর নির্মাণের কাজ। তার নড়বড়ে মাটির ঘরটি ভেঙে আধাপাকা ঘর নির্মাণ করছে সাইলেন্ট হ্যান্ডস নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নতুন ঘর পাওয়ার আনন্দে আপ্লুত ৭৮ বছর বয়সী এই নারী বলেন, “এখন আর কোনো চিন্তা বা হতাশা নেই। নতুন ঘরে আরাম করে ঘুমাতে পারব।”
গত ২৭ অক্টোবর ‘ঝুপড়ি ঘরে দুর্বিষহ জীবন কাটছে প্রতিবন্ধী মেহেরুন নেছার’ শিরোনামে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আসে উপজেলা প্রশাসন ও সাইলেন্ট হ্যান্ডস নামে সংগঠনটির। এরই মধ্যে ইউএনও বাড়িতে গিয়ে মেহেরুন নেছাকে চাল-ডালসহ শুকনো খাবার দিয়ে এসেছেন।
মেহেরুন নেছা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের বিরাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে গ্রামটিতে গিয়ে দেখে যায়, মেহেরুন নেছার নির্জন নড়বড়ে মাটির ঘরটি আর নেই। সেই স্থানে নির্মাণ হচ্ছে একটি আধাপাকা বারান্দাসহ ঘর। ঘরটির মেঝে ও পিলার ইট বালু আর সিমেন্টের তৈরি। বাঁশ আর কাঠের বাটার ওপরে দেওয়া হয়েছে টিনের ছাউনি। পাশে তৈরি হচ্ছে মোটা টিনের বেড়া।
নির্মাণাধীন ঘরের বারান্দায় বসে আছেন মেহেরুন নেছা
নতুন ঘর পেয়ে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে মেহেরুন নেছা বলেন, “আমি খুবই খুশি। আমার জন্য নতুন ঘর তৈরি হচ্ছে। আমার আর কোন কষ্ট হবে না। যারা আমার এই উপকার করলেন, আল্লাহ তাদের ভাল করবে।”
গ্রামের বাসিন্দা লাল মিয়া, আবু সাইদ, সোহেল রানা জানান, এই প্রতিবন্ধী মানুষটি অনেক অসহায়। তার স্বামী, ছেলে-মেয়ে কেউ নেই। অনেক কষ্ট করে চলাফেরা করেন। তার আগের ঘরটি বসবাসের মতো ছিলো না। ঝড়-বৃষ্টিতে তার খুব কষ্ট হতো। সাংবাদিকরা নিউজ করায় তার ঘরটি ভেঙে নতুন করে ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। গ্রামবাসী সবাই অনেক খুশি।
এ বিষয়ে ঘর নির্মাণের জায়গায় উপস্থিত সাইলেন্ট হ্যান্ডস সংগঠনের প্রতিনিধি কথা বলতে রাজি হননি।
সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “বিরাহিমপুর গ্রামের অসহায় প্রতিবন্ধী মেহেরুন নেছার অবস্থা আমি আগে থেকেই জানি। তিনি একজন প্রতিবন্ধী এবং অন্ধ মানুষ। সংসারে তার কেউ নেই। তার প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড আছে।”
তিনি বলেন, “মেহেরুন নেছার ঘরটির অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। তাকে একটা সুন্দর বাসস্থান করে দেওয়ার চেষ্টা ছিলো। তাকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে মিডিয়ায় সংবাদ হয়েছে। এই সংবাদ অনেক কাজে লেগেছে।”
ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি মেহেরুন নেছার বাড়িতে গিয়ে চাল-ডাল সহ শুকনো খাবার দিয়ে এসেছি। তার প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড আছে। একটি সংস্থা তার মাটির ঘরটি ভেঙে নতুন ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সবসময় তাকে সাহায্য সহযোগিতা করছেন। মেহেরুন নেছাকে আমরা সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করব।”