ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ঝুপড়ি ঘরে দুর্বিষহ জীবন কাটছে প্রতিবন্ধী মেহেরুন নেছার 

দিনাজপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১০, ২৭ অক্টোবর ২০২৫  
ঝুপড়ি ঘরে দুর্বিষহ জীবন কাটছে প্রতিবন্ধী মেহেরুন নেছার 

ঝুপড়ি ঘরে দুর্বিষহ জীবন কাটছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৭৮ বছর বয়সী মেহেরুন নেছার। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী তিনি। বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়েছে শরীর। স্বামী, সন্তান আর সংসারের স্বাদ মিলেনি জীবনে। জগতে অসংখ্য মানুষ থাকলেও তার দেখভালের কেউ নেই।

মেহেরুন নেছা প্রতিবন্ধী ভাতা পান। তবে, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বাবা-মার রেখে যাওয়া ঝুপড়ি ঘরটি তার একমাত্র সম্বল। দিনে দিনে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে সে ঘরও। সেটি আর বসবাসের উপযোগী নেই। 

ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের বিরাহিমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের এক কোণে ফসলি মাঠের পাশে ছোট একটি মাটির ঘর। ছাউনির টিনগুলো মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই চুইয়ে পড়ে পানি। বারান্দার অনেক টিন নষ্ট হয়ে পড়ে গেছে। বাঁশের খুঁটিগুলো নড়বড়ে। একটু ঝড়েই উড়ে যেতে পারে ঘর-বারান্দার টিনগুলো। 

জন্ম প্রতিবন্ধী মেহেরুন নেছা এই ঘরে একাকি সাপ ও শিয়ালের আতঙ্ক নিয়ে বাস করছেন। বাবা-মা বেঁচে থাকার সময় কিছুটা আদর-যত্ন পেয়েছেন। তারা মারা যাওয়ার পর থেকেই দুর্বিষহ জীবন শুরু হয় মেহেরুন নেছার। পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারেন না। চোখেও আলো নেই এখন। গ্রামবাসীদের সামান্য সহযোগিতায় বেঁচে আছেন মেহেরুন নেছা।

গ্রামবাসী রেজাউল করিম বলেছেন, আমি ছোটবেলা থেকেই এই প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষটিকে দেখছি। তার আপন বলতে কেউ নেই। চলাফেরা করতে পারেন না। হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করতে হয়। তার কষ্ট দেখে খুব দুঃখ লাগে।

মর্জিনা ও আলেয়া বেগম নামে দুই গ্রামবাসী নারী বলেন, উনার বাবা-মা নেই, বিয়েও হয়নি। জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। এখন চোখেও দেখতে পান না। বাবা-মার রেখে যাওয়া কুঁড়েঘরে থাকেন। তার ঘরটি বসবাসের মতো নয়। দেয়াল ভেঙে যাচ্ছে। উনার অসহায়ত্বের কথা এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার এবং উপজেলার লোকজনও জানেন। সবাই এখানে আসেন, দেখে যান; কিন্তু অসহায় মানুষটির ঘরের কোনো ব্যবস্থা করেন না তারা।

গ্রামবাসী ফরিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা গ্রামবাসী যতক্ষণ খাবার না দিই, ততক্ষণ তার আহার জোটে না। তার বয়স অনেক হয়েছে। ছেলেমেয়ে ও স্বামী নেই, কে দেখবে অসহায় হতদরিদ্র মানুষটিকে? সরকারি ঘর অনেকেই পায়, কিন্তু উনাকে আজও দেওয়া হয়নি। একটা ভালো ঘর থাকলে, তিনি একটু আরামে থাকতেন। চেয়ারম্যান-মেম্বার এবং ইউএনওসহ অনেকেই এখানে আসেন। তার আইডি কার্ড নিয়ে যান, কিন্তু, কোনো কাজ হয় না। আমরা আহ্বান জানাই, সরকার যেন এই প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষটির দিকে একটু সুনজর দেয়।

এ বিষয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেছেন, আমি সংবাদ পেয়ে এই প্রতিবন্ধী নারীর এখানে কিছু খাবার নিয়ে এসেছি। এনজিওর মাধ্যমে এখানে ঘর তৈরির ব্যবস্থা করব।

ঢাকা/মোসলেম/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়