বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টার দিকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজতৈনিক দলের নেতারা।
বিএনপির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর তথ্য জানিয়ে লেখা হয়, “বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় ফজরের ঠিক পরে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। আমরা তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং সকলের নিকট তাঁর বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া চাচ্ছি।”
নিজের ফেসবুক পোস্টে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লেখেন, “আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকাহত (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।”
শোক জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি লেখেন, “তিনি ছিলেন সব নেতার মধ্যে সবচেয়ে করুণাময় - আমাদের প্রতিরোধের প্রতীক এবং সর্বোচ্চ স্তরের একজন দেশপ্রেমিক। তিনি শেষ অবধি একজন যোদ্ধা ছিলেন। আমাদের সবচেয়ে কঠিন সময়ে আশার আলো। আজীবন সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের প্রকৃত চেতনাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তিনি ছিলেন আমার নায়ক।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, “স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর সাহসী নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে এদেশের মানুষকে পথ দেখিয়েছে। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনরুদ্ধারে রেখেছেন অসামান্য ভূমিকা।”
“দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন এবং চড়াই-উৎরাই পার করেছেন, কিন্তু নিজের রাজনৈতিক আদর্শ ও জনগণের অধিকারের প্রশ্নে তিনি ছিলেন অবিচল। দেশ ও জাতির সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ছিলেন আপোসহীন”, যোগ করেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম আরো লেখেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বেগম খালেদা জিয়ার অবদান এবং সংগ্রামের স্মৃতি নিশ্চয়ই সংরক্ষিত থাকবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে থাকবে অনুপ্রেরণা হয়ে। আজ তাঁর প্রয়াণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মহান আল্লাহর কাছে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও তার অসংখ্য অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”
শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক থেকে পোস্ট দিয়ে তিনি লিখেছেন, “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপরে রহম করুন, ক্ষমা করুন এবং তার প্রিয় জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। তার আপনজন, প্রিয়জন ও সহকর্মীদেরকে মহান আল্লাহ সবরে জামিল দান করুন। আমিন।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম শোক প্রকাশ করেছেন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক চর্চায় ও ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া একজন উজ্জ্বল ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিলেন।”
চরমোনাইপীর তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত!”
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। এক শোক বার্তায় দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রাম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির ইতিহাসে তিনি এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়।
তারা বলেন, তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে গণতন্ত্র, জাতীয় স্বার্থ ও মানুষের অধিকার রক্ষায় অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন। তার নেতৃত্ব ও অবদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে চির সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে। দীর্ঘকাল ধরে তিনি স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে থেকে আপোষহীন নেতৃত্ব দিয়েছেন।
নেতারা বলেন, ওয়ান-ইলাভেনের ষড়যন্ত্রকাল থেকে শুরু করে ফ্যাসিবাদী যুগে আধিপত্যবাদের ক্রীতদাসেরা ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকে এই মহীয়সী নেত্রীকে কারাবন্দি করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। তাঁকে ন্যূনতম চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য চরম লজ্জাজনক। মূলতঃ দীর্ঘকালের শারীরিক, মানসিক নির্যাতন ও চরিত্র হননের মত অমানবিক জেল-জুলুমের পরিণতিই আজ বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু। দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণকালে তার নেতৃত্ব আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল; আমরা তার শূন্যতা গভীরভাবে অনুভব করব।