পজিটিভ বাংলাদেশ

হুইল চেয়ার নিয়ে সেই বাবা-ছেলের বাড়িতে ইউএনও

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার সেই শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবা-ছেলের বাড়িতে হুইল চেয়ার পৌঁছে দিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল।

শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল ও সমাজাসেবা কর্মকর্তা কাজী জয়নূর রহমান তাদের বাড়িতে গিয়ে হুইল চেয়ার পৌঁছে দেন। 

হুইল চেয়ার পেয়ে উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের বালিদিয়া গ্রামের মৃধা পাড়ার প্রতিবন্ধী ছেলে সাকিবুল ও বাবা শাহাজাহান মৃধা দারুণ খুশি।

গত ১২ এপ্রিল জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের সারা বাংলা বিভাগে ‘বাবা-ছেলের কঠিন জীবন সংগ্রাম’ শিরোনামে ভিডিও প্রতিবেদন ও সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাড়া পড়ে।

দিনমজুর বাবা শাহাজাহান মৃধা ২০০৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় একটি পা হারান। বড় ছেলে সাকিবুল ইসলাম (১৩) শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে পারে না। কখনো বাবা কোলে করে স্কুলে নিয়ে যান। আবার কোনো দিন বন্ধুরা তাকে স্কুলে নিয়ে যায়। বাবা-ছেলের দুজনেরই একটি হুইল চেয়ার হলে চলাচল সহজ হতো। কিন্তু দারিদ্র্যতার কারণে যেখানে দু’বেলা ভাতই জোটে না, সেখানে হুইল চেয়ার অনেকটা দিবা স্বপ্ন।

সাকিবুলের মা হোসনে আরা বলেন, ‘সাকিবুল বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, পড়ালেখায় সে অত্যন্ত ভালো। প্রাথমিকের সব ক্লাসে সে প্রথম বা দ্বিতীয় হয়েছে। মাধ্যমিকে ওঠার পর তার রোল নম্বর এক থেকে তিনের মধ্যে থেকেছে। সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর অসুস্থ্যতা আরও বেড়ে যায়। তারপর ক্লাসের ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে তার রোল এখন আট। কিন্তু দারিদ্র্যতা আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হার মানতে বসেছে সে। তবে, হুইল চেয়ার পেয়ে আমরা সবাই প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞ।’ 

মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের পানিঘাটা গ্রামে সাকিবুলের মা হোসনে আরার বাবার বাড়ি। ২০০৪ সালে শাহাজাহান মৃধার সঙ্গে বিয়ে হয়। মাদ্রাসা থেকে ফাজিল (বি এ সমমান) পাস করেও চাকরি পাননি। তিনি এখন ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করছেন। এক ছেলে-দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলে সাকিবুল ছোটবেলা থেকে সুস্থই ছিল। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তার শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়। বড় হয় আর তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সাকিবুলের চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়। সে এখন অন্যের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারে না। 

এক পা নিয়ে শাহাজাহান মৃধা কৃষি কাজের পাশাপাশি দর্জির কাজও করেন। ছেলেটা অত্যন্ত মেধাবী। তাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে হয়। 

সাকিবুল ইসলাম বলে, ‘আমার বিমান চালানোর ইচ্ছা। না হলে ডাক্তার বা বিজ্ঞানী হতে চাই। এজন্য আমার একটি ইঞ্জিনচালিত (ইলেকট্রিক) হুইল চেয়ারের দরকার ছিল। চেয়ারটি পেয়ে অনেক খুশি। আমি জীবনে বহুদূর যেতে চাই।’  

সাকিবুলের সহপাঠী অষ্টম শ্রেণির তিনজন শিক্ষার্থী সিয়াম, সৌরভ ও লিমা   বলে, সাকিবুল পড়ালেখায় খুবই ভালো। গণিত-বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো সে সহজেই সমাধান করতে পারে। অনেক বিষয় সে আমাদের চেয়ে দ্রুত সময়ে সমাধান করতে পারে। আমরা তাকে বাড়ি থেকে স্কুলে নিয়ে-আসতে সহযোগিতা করি।’

প্রতিবেশী সিদ্দিক মৃধা জানান, বাবা-ছেলের প্রতিবন্ধকতা তাদের খুবই কষ্ট দেয়। দারিদ্র্যতার কারণে আজ তারা খুবই অসহায়। তাদের চলাচল সহজ করতে সরকারি সহায়তা ও হুইল চেয়ার খুবই দরকার ছিল। তাদের এই চেয়ারটা পাওয়ায় সবাই খুশি।

বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাফুজুর রহমান বলেন, ‘সাকিবুল ইসলাম বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। তার মেধাশক্তি অত্যন্ত প্রখর। পড়ালেখার জন্য স্কুল থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। সাকিবুলের চলাচলেরে জন্য একটি হুইল চেয়ার খুবই দরকার ছিল। সে হুইল চেয়ার পেয়েছে জেনে প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’  

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, ‘সাকিবুল ইসলামকে একটি হুইল চেয়ার দিতে পেরে ভালো লাগছে। আমরা তাকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই।’