ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

বাবা-ছেলের কঠিন জীবন সংগ্রাম

শাহীন আনোয়ার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৩, ১৩ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১১:২০, ১৪ মার্চ ২০২১

মাগুরার মোহাম্মাদপুরের বালিদিয়া ইউনিয়নের বালিদিয়া গ্রামের ‌শাহাজাহান মৃধা। পেশায় দিনমজুর। ২০০৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় একটি পা হারান। তার পর থেকে সংগ্রামী মানুষটির জীবন সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে গেছে। 

তার বড় ছেলে সাকিবুল ইসলাম (১৩)। সেও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সাকিবুল। হেঁটে স্কুলে যেতে পারে না। কখনও প্রতিবন্ধী বাবার কোলে চেপে স্কুলে যায়। আবার কখনও বন্ধুদের সহযোগীতা নিয়ে তাকে স্কুলে যেতে হয়। 

সাকিবুলের মা হোসনে আরা বলেন, আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হলেও বেশ মেধাবী। পড়ালেখায় সে অত্যন্ত ভালো। প্রাথমিকের সব ক্লাসে সে প্রথম বা দ্বিতীয় হয়েছে। হাইস্কুলে ওঠার পর তার রোল এক থেকে তিনের মধ্যে থেকেছে। সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর অসুস্থতা অনেক বেড়ে যায়। অষ্টম শ্রেণিতে ক্লাসের দুইশ’ শিক্ষার্থীর মধ্যে তার রোল এখন আট। পড়ালেখায় ছেলেটির দারুণ আগ্রহ। কিন্তু দারিদ্রতা আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হার মানতে বসেছে সে।’

হোসনে আরার বাবার বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের পানিঘাটা গ্রামে। ২০০৪ সালে শাহাজাহান মৃধার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মাদ্রাসা থেকে ফাজিল (বি এ সমমান) পাশ করেও চাকরি পাননি। তিনি এখন ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া শেখানোর চেষ্টা করেন। এক ছেলে-দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। 

বড় ছেলে সাকিবুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়। দিন যায়, অসুস্থতাও বাড়ে। এক পর্যায়ে সাকিবুলের চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়। এখন অন্যের সহযোগিতা ছাড়া নিজে থেকে চলতে পারে না। এ অবস্থায়ও রাকিবুলের পড়ালেখা থেমে নেই। অদম‌্য আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে চলেছে সে।

সাকিবুলের বাবা শাহাজাহান মৃধা বলেন, ‘‘মাত্র দশ শতাংশ কৃষি জমি আর তিন শতাংশের বসত ভিটাই আমার সম্বল। ২০০৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আমার একটি পা কেটে ফেলতে হয়। তারপর থেকে অসহায় হয়ে পড়েছি। এই এক পা নিয়েই কৃষি কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি দর্জির কাজও করি। সংসারে স্বচ্ছলতা নেই। নিতান্ত প্রয়োজনও মেটানো মুশকিল। ছেলেটা অত্যন্ত মেধাবী। তাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে হয়। বাচ্চাদের এখন বাড়তি বয়স। ভালো খাবার, গৃহশিক্ষক ও শিক্ষা উপকরণ কিনে দিতে পারি না। এ অপূর্ণতা কীভাবে পূরণ করি?”

শারীরিক প্রতিবন্ধী সাকিবুল ইসলাম বলে, ‘বড় হয়ে লেখাপড়া শিখে বিমান চালাতে চাই। তা না হলে ডাক্তার বা বিজ্ঞানি হতে চাই। কিন্তু একা একা চলার ক্ষমতাই নেই। কী করে এসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব? আমার নিজের ও বাবার জন‌্য একটা করে ইঞ্জিনচালিত হুইল চেয়ার খুব প্রয়োজন। আমাদের সেই সামর্থ‌্য নেই! স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই রয়ে যাবে! তবে দেশের হৃদয়বান মানুষেরা পাশে দাঁড়ালে হয়তো আমাদের পথ চলা মসৃণ হবে।’

সাকিবুলের সহপাঠী সিয়াম, সৌরভ ও লিমা জানায়, সাকিবুল পড়ালেখায় খুবই ভালো। গণিত-বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো সে সহজেই সমাধান করতে পারে। অনেক বিষয় অন‌্যদের চেয়ে দ্রুত সময়ে সমাধান করতে পারে সাকিবুল। 

প্রতিবেশী সিদ্দিক মৃধা জানান, বাবা-ছেলের অনেক কষ্ট। দারিদ্রতার কারণে তারা খুবই অসহায়। চলাচল করতে তাদের অনেক সমস‌্যা হয়। তাদের জীবন সংগ্রাম খানিকটা সহজ করতে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি দুটো হুইল চেয়ার খুবই দরকার।

বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাফুজুর রহমান বলেন, ‘সাকিবুল ইসলাম বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু। তার মেধাশক্তি অত্যন্ত প্রখর। তার পড়ালেখার জন্য স্কুল থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। তবে চলাফেরা করতে অনেক কষ্ট হয় ছেলেটির। একটি ইঞ্জিনচালিত হুইল চেয়ার হলে ছেলেটির খুব উপকার হতো।’

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রতিবন্ধি বাবা-ছেলে সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না। আপনার মাধ‌্যমে জানলাম। তাদের খোঁজ খবর নেওয়া হবে, সহযোগিতাও করা হবে।’

মাগুরা/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়