পজিটিভ বাংলাদেশ

সুস্থ জীবনের আশা দেখছেন হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র হয়ে যাওয়া শাহীন

ক’দিন আগেও অনিশ্চিত জীবনের কথা ভেবে হতাশায় ভুগছিলেন ১৩ বছরের কিশোর শাহীন আলম। মা আমেনা বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত একমাত্র সন্তানকে নিয়ে পড়েছিলেন চরম দুশ্চিন্তায়। অসহায় এই মায়ের দুশ্চিন্তা অনেকটাই কেটে গেছে।  

অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে সন্তানকে বাঁচাতে দুখিনী মায়ের আকুতি শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর অনেকেই শাহীনের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু তাতেও চিকিৎসার পুরো খরচ সংগ্রহ করা যায়নি। এমন সংকটময় অবস্থায় রাইজিংবিডির মহানুভব এক পাঠক শাহীনের চিকিৎসার পুরো ব্যয়ভার বহনে এগিয়ে আসেন। এরপর দ্রুত শাহীন আলমকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন ও সহকারী অধ্যাপক ডা. তাহমিনা জেসমিনের অধীনে শাহীনের হৃদরোগের চিকিৎসা চলছে। 

বগুড়ার ধুনট উপজেলার শাহীন আলমের মা ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। ১০ বছর আগে বাবা মুনসুর আলী মারা গেছেন। এরপর অনেক কষ্ট করে আমিনা খাতুন ছেলেকে বড় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই শাহীন হৃদরোগে আক্রান্ত হন। একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে ওঠা, ভারী কাজ করতে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসা, বুকে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তারা জানান  শাহীনের হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র রয়েছে। এ সংবাদে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে আমেনা বেগমের। শুরু হয় ছেলেকে বাঁচানোর সংগ্রাম। এই সংগ্রামে যাদের পাশে পেয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার নিজস্ব জমি নেই, নেই থাকার জন্য ঘর। স্বামী-সন্তান হারিয়ে শাহীনকে বুকে আগলে মানুষের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে কোনোরকমে বেঁচে আছি। শাহীনই আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। আপনারা দোয়া করবেন ও যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

আগামী ২০ আগস্ট শাহীনের অপারেশন হবে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় শাহীন মায়ের সঙ্গে বসে আছেন। গরমে ঘেমে যাওয়ায় ছেলের কপাল, মুখ শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে দিচ্ছেন আমেনা বেগম। সাহস দিচ্ছেন ছেলেকে। এ সময় আমেনা বেগম বলেন, ‘কদিন আগেও যখন ওর চিকিৎসার খরচ নিয়ে ভাবতাম, কপালে ঘাম হতো। তখন আমার ছেলে আমার ঘাম মুছে দিতো আর বলতো- দেখো মা, আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবে। একজন মহান মানুষকে সত্যি সত্যি আল্লাহ আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন।’ 

শাহীন আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, আমি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে চাই। আমি আবার স্কুলে যেতে চাই, ক্লাসে ফিরতে চাই। সবাই দোয়া করবেন।

উল্লেখ্য শাহীন আলমের চিকিৎসার খরচ বহনে ইচ্ছুক সেই মহানুভব ব্যক্তি নাম প্রকাশে রাজি হননি।