খেলাধুলা

১৯৫০: ‘ফাইনাল ম্যাচ’ না খেলেও চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে

আয়োজক: ব্রাজিল, দল: ১৩, ভেন্যু: ৬, ফাইনাল: ব্রাজিল ও উরুগুয়ে, জয়ী: উরুগুয়ে (২-১), ইতিহাস: নকআউট পর্ব ছিল না, ছিল না ফাইনাল। সর্বোচ্চ পয়েন্ট সংগ্রহকারী দল চ্যাম্পিয়ন। ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হবে ভেবে মারাকানা স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিল প্রায় ২ লাখ সমর্থক।   

টানা ১৬ বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। তারপরও ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে ছিল সংশয়। তবে সে সংশয় কাটিয়ে উঠে সফলতার সঙ্গেই মাঠে গড়ায় বল। 

আগের দুই আসর হয়েছিল অদ্ভুত এক নিয়মে! ছিল না গ্রুপ পর্ব। নকআউট পর্বেই হয় বিশ্বকাপ। তবে চতুর্থ বিশ্বকাপে তা থেকে সরে আসে ফিফা। কিন্তু তাতে কি? এবার নেয় আরও এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত। নকআউট পর্ব তো ছিলই না, ছিল না ফাইনাল ম্যাচ। গ্রুপ পর্বের সর্বোচ্চ পয়েন্ট সংগ্রহকারী দলকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।

চতুর্থ বিশ্বকাপের আগে ফিফার সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয় জার্মানি ও জাপানকে। তবে এবারই প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে আসে ফুটবলের জনক দেশ ইংল্যান্ড। বাছাই পর্ব শেষে যথারীতি বেছে নেওয়া হয় ১৬টি দল। তবে এ নিয়েও আছে নানা বিতর্ক। বাছাই পর্বে সুযোগ পেয়েও শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহার করে নেয় ফ্রান্স, স্কটল্যান্ড ও তুরস্ক। বিশেষ করে ফ্রান্সের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে আরও- ভারতীয়দের দাবি এ বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছিল তারা। তবে বিশ্বকাপে বুট পরে খেলতে হবে জানার পর নাম প্রত্যাহার করে নেয় তারা।

শেষ পর্যন্ত চতুর্থ বিশ্বকাপে ১৩টি দল অংশ নেয়। সেবার ইউরোপ থেকে খেলতে আসে ৬টি দল- যুগোস্লাভিয়া, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, ইংল্যান্ড, সুইডেন ও ইতালি। ল্যাতিন আমেরিকার ৫টি- বলিভিয়া, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, চিলি ও ব্রাজিল। বাকি ২টি দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো। চারটি গ্রুপ করে শুরু হয় বিশ্বকাপ। এরপর চারটি গ্রুপের চার চ্যাম্পিয়ন দল নিয়ে হয় ফাইনাল পর্ব।

প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দুর্বল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ১ গোলে হারে ইংল্যান্ড। কিন্তু ইংরেজরা তা মানতে নারাজ। তাদের দাবি আসলে ফলাফল ছিল ১০-১। প্রিন্টারে ভুলবশত ১ না ছাপা হওয়ায় হয়েছে ০-১। আর এ দাবিতে এখনও বদ্ধমূল দেশটি। প্রথম লেগের চার গ্রুপে বিজয়ীদের দলগুলো ছিল স্বাগতিক ব্রাজিল, উরুগুয়ে, স্পেন ও সুইডেন।

প্রথম লেগের মতো ফাইনাল পুলের শুরুটাও দারুণ করে ব্রাজিল। ৭-১ গোলে উড়িয়ে দেয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালিকে বিদায় করে দেওয়া দল সুইডেনকে। পরের ম্যাচেও তারা দুর্দান্ত। এবার ৬-১ গোলে উড়িয়ে দেয় স্পেনকে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিততে শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে দরকার ছিল কেবল হার এড়ানো। আর সে ম্যাচের শুরুটাও হয় দারুণ। ৪৭ মিনিটে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। কিন্তু এরপর ২টি গোল খেয়ে উল্টো হেরে বসে দলটি। দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপায় চুমু খায় উরুগুয়ে।

অথচ ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হবে ভেবে মারাকানা স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিল প্রায় ২ লক্ষ সমর্থক। যা ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ উপস্থিতির রেকর্ড। আগের দুই ম্যাচের ফলাফলই আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছিল তাদের। উরুগুয়ে যেখানে সুইডেনের বিপক্ষে জিতেছিল ৩-২ গোলে, আর স্পেনের বিপক্ষে জিততেই পারেনি। ২-২ গোলে ম্যাচ ড্র। অথচ ব্রাজিল এই দুই দলের বিপক্ষে দিয়েছিল ১৩ গোল। কিন্তু অলিখিত সেই ফাইনালে খেই হারিয়ে শুধু শিরোপাই হারায়নি তারা, হারিয়েছিল দেশটির বেশ কিছু ভক্তকেও। প্রিয় দলের হার সইতে না পেরেই মারাকানার ছাদ থেকে লাফিয়ে পরে আত্মহুতি দেয় তারা।

১৯৩৪: এক ম্যাচ খেলেই আর্জেন্টিনার বিদায়