সারা বাংলা

লঞ্চে আগুন: ছেলের জন্য পাগলপ্রায় মা 

রাতে লঞ্চের টয়লেটে যায় আমার বড় বাবা। এরপরই লঞ্চে আগুন লাগার কথা জানতে পারি। এ সময় ছোট ছেলেকে রেখে দৌঁড়ে লঞ্চের নিচ তলায় যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু লোকজনের ভিড়ে কহন যে লঞ্চ হইতে বাইরে নামি নিজেই কইতে পারি না। কয়েক ঘণ্টা পর ছোট বাবাকে পাইছি। কিন্তু আমার বড় বাবারে আর পাইলাম না। আপনারা আমার বড় বাবারে দেখছেন?

এইভাবেই কান্না জড়ানো কণ্ঠে ১৪ বছর বয়সী ছেলে স্বপ্ননিলকে খুঁজে না পেয়ে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বারান্দতে বসে আর্তনাদ করতে দেখা গেছে গিতা রানী নামের এক মাকে। 

পড়ুন: তিন তলা লঞ্চে যাত্রী ছিলো পাঁচ শতাধিক

বরগুনা বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা গিতা রানী। তার স্বামী সঞ্জিব চন্দ্র হালদার ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। থাকেন ঢাকার উত্তরায়। গিতা রানী তার দুই সন্তান স্বপ্ননিল চন্দ্র হালদার ও ৬ বছর বয়সী প্রত্যায়কে নিয়ে ঢাকা থেকে ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চে করে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তার বড় ছেলে স্বপ্ননিল ঢাকা উত্তরা স্কুল এ্যান্ড কলেজের ৯ শ্রেণির ছাত্র।

পড়ুন: দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চটির মালিকপক্ষকে পাওয়া যায়নি: ডিসি

গিতা রানী বলেন, ‘রাতে আমার বড় ছেলে স্বপ্ননিল লঞ্চের টয়লেটে যায়। এর ৫ মিনিট পরই লঞ্চে আগুন লাগার খবর জানতে পারি। এ সময় যাত্রীরা আত্মরক্ষায় এদিক সেদিক ছুটতে থাকে। আমি আমার বড় ছেলের ফেরার অপেক্ষায় ছিলাম। বড় ছেলের চিন্তায় ছোট ছেলেকে ভুলে দৌঁড়ে লঞ্চের নিচ তলায় যাওয়ার চেষ্টা করি। যাত্রীদের ধাক্কা-ধাক্কিতে কখন যে লঞ্চ থেকে তীরে নেমে যাই তা বলতে পারবো না। তখন মনে পরে আমার ছোট ছেলে প্রত্যয় সঙ্গে নেই। অনেক খোঁজা খুঁজির পর ছোট ছেলেকে পেলেও বড় ছেলে স্বপ্ননিলকে এখনো খুঁজে পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘ভোর থেকেই সুগন্ধা নদীর আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। সেখানে না পেয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটেছি। কিন্তু কোথাও ওকে (স্বপ্ননিল) খুঁজে পাইনি। পরে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাপসাতালে এসেছি। ’

বরগুনাগামী ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চের আগুনের ঘটনায় শুধু স্বপ্ননিলই নয় এখনো নিখোঁজ রয়েছে অগণিত মানুষ। নিখোঁজদের আত্মীয় স্বজনরা ঘটনাস্থলে তাদের স্বজনদের খুঁজে না পেয়ে এভাবেই এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই আবার নিজের প্রিয়জনকে খুঁজতে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভিড় করছেন। তাদের আর্তনাদে হাসপাতালটিতে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

পড়ুন: লঞ্চে আগুন: দগ্ধ ৭২ জন শেবাচিমে ভর্তি 

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় সুগন্ধা নদীর পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বরগুনাগামী ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অসংখ্য যাত্রী। এছাড়া অগ্মিদগ্ধ হয়ে ঝালকাঠী ও শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার্ধীন রয়েছেন শতাধিক রোগী।