সারা বাংলা

উৎসবের মণ্ডপে শোকের ব্যানার

মহালয়ায় ক্ষণ গণনা দিয়ে শুরু হওয়া দুর্গোৎসব শেষ হয় দশমীর দিন ঠাকুর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। মহালয়া থেকে দশমী পর্যন্ত আনন্দ উদ্দীপনা থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিটি ঘরে। ধর্মীয় রীতিতে এবারও হচ্ছে এই উৎসব। তবে আনন্দ উদ্দীপনা নেই পঞ্চগড়ের করতোয়া পাড়ের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। শোকের মাতম চলছে বাড়ি বাড়িতে। ফলে উৎসবের মণ্ডপে ঝুলানো হয়েছে শোকের ব্যানার।

শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাড়েয়া বাজার সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে গিয়ে দেখা যায় উৎসব ঘিরে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন গেটও। আর গেটের মধ্যেই লাগানো একটি শোক ব্যানার।

আয়োজকরা বলেন, নৌকাডুবিতে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা শোকাহত। এমন শোক ব্যানার ইউনিয়নের ১৪টি পূজা মণ্ডপে লাগানো হয়েছে। 

আরো পড়ুন: করতোয়া ঘাটে স্থাপিত হলো সম্প্রীতির অনন্য নজির

গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকার করতোয়া নদীতে দেড় শতাধিক যাত্রীসহ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। সে সময় অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়। পরে উদ্ধার অভিযান শুরু করে স্থানীয়রাসহ প্রশাসন। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এরমধ্যে ৬৮ জনই সনাতন ধর্মের। কেবলমাত্র মাঝি হাশেম আলীই ছিলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী। এছাড়া আরো তিনজন এখনো নিঁখোজ রয়েছেন।

আরো পড়ুন: পেয়েছেন বৌমার লাশ, এখন ছেলের অপেক্ষা

স্থানীয়রা জানান, মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে সনাতন ধর্মীদের তীর্থস্থান বদেশ্বরী মন্দির। মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয় মন্দিরে। রোববার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকা যোগে নদী পার হচ্ছিলেন।

আরো পড়ুন: পঞ্চগড়ে নৌকাডুবি, সেই ঘাটে হচ্ছে সেতু

মাড়েয়া বাজার সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সভাপতি মহনী বাবু বলেন, ‘নৌকাডুবির ঘটনাটি আমাদের ইউনিয়নের। তাছাড়া মৃতদের অধিকাংশের বাড়িও এই ইউনিয়নে। ভয়াবহ এই ঘটনায় যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের শোকে আমরা সবাই শোকাহত।’

একই ইউনিয়নের বটতলি এলাকার গোবিন্দ্র চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘দেবী মায়ের কী ইচ্ছে জানি না। তার ভাসানের আগেই আমাদের ৬৮ জন ভক্তের ভাসান হয়ে গেল। এবার দুর্গাপূজা কিভাবে করব আমরা ভেবে পাচ্ছি না। বিধাতার লিলা বোঝা বড় মুশকিল। তবে নির্মম হলেও নিয়তি মেনে নিতে হয়।’

আরো পড়ুন: ৫ স্বজন হারালেও বেঁচে ফেরেন অর্পিতা, থামছে না আহাজারি

স্থানীয় প্রশাসন থেকে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া মৃতদের মধ্যে নারী ৩০ জন, শিশু ২১ জন ও পুরুষ ১৮ জন। এর মধ্যে দেবীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ১৮ জন, বোদা উপজেলার ৪৫ জন, আটোয়ারীর দুজন, ঠাকুরগাঁও সদরের তিনজন ও পঞ্চগড় সদরের একজন আছেন।

আরো পড়ুন: পঞ্চগড়ে নৌকাডুবি: স্বামী হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে দিশেহারা ফুলমতি

এদিকে, নৌকাডুবির ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায়কে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। আগামী রোববার কমিটি প্রতিবেদন জমা দিবে বলে জানা গেছে।