সারা বাংলা

রেললাইনে রাবি শিক্ষার্থীরা, ট্রেন চলাচল বন্ধ

ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষের জেরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ রেললাইনের ওপর অবস্থান নিয়েছেন। ফলে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া অন্য সব জেলার ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে কোনও ট্রেন ঢুকছে না। এমনকি, কোনও ট্রেন রাজশাহী থেকে বেরও হতে পারছে না।

পড়ুন- রাবির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৭ প্লাটুন বিজিবি

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ শিক্ষার্থী শুয়ে-বসে আছে। ট্রেন যাওয়ার কোনও উপায় নেই। তাই রাতে রাজশাহী থেকে ঢাকামুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যেতে পারেনি। রাত ১১টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্য রাজশাহী ছেড়ে যাবার কথা ছিল।

এদিকে, রেললাইন অবরোধ থাকায় ঢাকা থেকে রাজশাহী হয়ে একটি মেইল ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারেনি। ট্রেনটি নাটোরের আবদুলপুর জংশনে আটকে আছে বলে জানান ব্যবস্থাপক আবদুল করিম।

পড়ুন- রাবি শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ চলছেই, আহত দুই শতাধিক

রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতানুল ইসলাম জানান, এই সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রাত ১২টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৮৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই রাবি শিক্ষার্থী। তবে কারও শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়।

উল্লেখ্য, শনিবার সন্ধ্যায় বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী। বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়িচালক শরিফুল ও তার সহযোগী রিপনের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিনোদপুর বাজারে বাস থেকে নামার সময় তাদের আবারও কথা-কাটাকাটি হয়। এসময় বিনোদপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ী বাসচালকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। তখন শিক্ষার্থীদের সাথে তার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। এসময় ব্যবসায়ীরা তার মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করেন। ধাওয়া দিয়ে তাকে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতেই ঘটনা বড় হয়ে যায়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল থেকে বের হয়ে বিনোদপুর গেটের পাশে অবস্থান নেন। আর ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেন রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বিনোদপুর বাজারে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে অন্ধকারের ভেতর ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। এসময় অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আহত হন অন্তত ১০ জন।

এদিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে সন্ধ্যার পরেই ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য যান। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া প্রথমে তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কোন চেষ্টায় করেনি তারা। পরে আসে র‍্যাবের ১২০ জন সদস্য। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাত প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা বর্তমানে বিনোদপুর বাজারে অবস্থান করছেন।

সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বিনোদপুর বাজারের সামনে দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ আছে। রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি আরেক দফা উত্তাল হয়ে ওঠে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে বের হয়ে মহাসড়কে চলে আসেন। তারা আবারও দোকানপাটে আগুন দিতে শুরু করেন। এ সময় পুলিশ টিয়ার সেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করে। এখন আবার ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষার্থী এবং বাইরে মহাসড়কের ওপরে পুলিশ অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে মহাসড়কে পেট্রোল বোমা উড়ে এসে পড়ছে।

পড়ুন- রাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ

রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, যেহেতু তারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, তাই বিষয়টি স্পর্শকাতর। এজন্য পুলিশের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান করছেন। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।