ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাবি শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ চলছেই, আহত দুই শতাধিক

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ১১ মার্চ ২০২৩  
রাবি শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ চলছেই, আহত দুই শতাধিক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষার্থী ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে শুরু হওয়া সংঘর্ষ শনিবার রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তুমুল সংঘর্ষে ইতোমধ্যে দুই পক্ষের অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আহতদের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। 

শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় সংঘর্ষ। রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতানুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের সামনে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, এই সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী। বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়িচালক শরিফুল ও তার সহযোগী রিপনের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিনোদপুর বাজারে বাস থেকে নামার সময় তাদের আবারও কথা-কাটাকাটি হয়। এসময় বিনোদপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ী বাসচালকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। তখন শিক্ষার্থীদের সাথে তার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। এসময় ব্যবসায়ীরা তার মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করেন। ধাওয়া দিয়ে তাকে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতেই ঘটনা বড় হয়ে যায়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল থেকে বের হয়ে বিনোদপুর গেটের পাশে অবস্থান নেন। আর ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেন রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বিনোদপুর বাজারে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে অন্ধকারের ভেতর ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। এসময় অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আহত হন অন্তত ১০ জন।

আহতদের মধ্যে ক্যাম্পাসে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিকও আছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহত সংখ্যা দুই শতাধিক দাবি করা হলেও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেছেন ৩৮ জন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে সন্ধ্যার পরেই ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য যান। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কোনও চেষ্টায় করেননি তারা। রাত আটটার দিকে বিনোদপুর গেটের পাশে থাকা পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া বিনোদপুর বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মুহূর্তেই বিনোদপুর বাজারে সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ওই সময় অন্ধকারের ভেতর বিনোদপুর বাজার থেকে ব্যবসায়ীদের ক্যাম্পাসের দিকে অনবরত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে বিনোদপুর বাজারের দিকে অসংখ্য পেট্রোল বোমা উড়ে আসতে দেখা যায়। ক্যাম্পাসের আবাসিক হলগুলো থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও লাঠিসোটা এবং অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিতে দেখা যায়।

এই পরিস্থিতিতে রাজশাহী ঢাকা মহাসড়কে বিনোদপুর বাজারের সামনে দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। রাত সাড়ে আটটার দিকে বিনোদপুর বাজারে আসেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এ এইচ এম খাইরুজ্জামান লিটন। তিনি দুই পক্ষকেই শান্ত হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। অ্যাকশন চলছিলই। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসার পর রাত ৯টা পাঁচ মিনিটে প্রথম অ্যাকশন শুরু করে। পুলিশ লাঠিপেটা ও ধাওয়া দিয়ে বিনোদপুর বাজার থেকে ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। রাজশাহীর নগর পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম এবং র‍্যাবের সদস্যরা এ অভিযানে অংশ নেন। দাঙ্গা দমনের কাজে ব্যবহৃত পুলিশের একটি এপিসি গাড়ি দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে দেখা যায়। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি এসে দোকানপাটগুলোর আগুন নিভিয়েছে। রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। এসময় পুলিশ টিয়ার সেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করে।

ঘটনার ব্যাপারে রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ বক্তব্য দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত শিক্ষার্থী আহতের সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। ঘটনার ৩ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন এসব ব্যাখ্যা করার সময় নয়, কাজ করার সময়। আমাদের কাজ করতে দিন।

এ ঘটনায় রোববার ও সোমবার সব ধরনের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঘটনার প্রায় ৪ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। এসময় তিনি মাইকে এ ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা দেওয়ার পর তোপের মুখে পড়েন তিনি। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস বন্ধের প্রতিবাদ জানান।

উপাচার্য মাইকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের প্রতি অনুরোধ, হলে ফিরে যাও। তোমাদের জন্য প্রশাসন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। রুমে যাও তোমরা। এ ঘটনায় প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে।

কেয়া/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়