নির্ধারিত সময়ের আগে আম্পায়াররা দুই দলের খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমের পথ দেখালেন। ততক্ষণে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সবকটি ফ্লাডলাইটে আলো জ্বলছিল। দিনের খেলা তখনও ৩ ওভার বাকি। খেলোয়াড়রা ড্রেসিংরুমের পথে চললেও আম্পায়াররা বেলস ফেলেননি। চতুর্থ আম্পায়ার মুকুল লাইট ডিটেক্টর নিয়ে মাঠে প্রবেশের পর নিশ্চিত হয় আলোকস্বল্পতায় চতুর্থ দিনের খেলার সমাপ্তি।
সিলেটের পর ঢাকা টেস্টেও জয়ের সুবাতাস পাচ্ছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের আর ৪ উইকেট নিতে পারলেই সিরিজটা নিজেদের করে নিতে পারবে। ম্যাচ বাঁচাতে আয়ারল্যান্ডকে লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। ৫০৯ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে ৬ উইকেটে তাদের রান ১৭৬। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ১১ ও কুর্টিশ ক্যাম্পার ৩৪ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। আয়ারল্যান্ডের টপ ও মিডল অর্ডার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে তেমন লড়াই করতে না পারলেও তাদের লেজের ব্যাটসম্যানরা প্রায় প্রতি ইনিংসেই ছাপ রাখছেন। আগামীকাল তারা ম্যাচটা কতদূর নিয়ে যেতে পারেন সেটাই দেখার।
দুই দলের লড়াইয়ে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, মিরপুর টেস্ট পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। শেষ পাঁচ বছরে মিরপুর শের-ই-বাংলা টেস্ট পেয়েছে কিছুটা কম। সিলেট ও চট্টগ্রামেও খেলা হয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত ১০ টেস্ট খেলা হয়েছে মিরপুরে। পঞ্চম দিনে ম্যাচ গিয়েছে কয়টা সেটা হাতে গুনে বলে দেওয়া যাবে।
বাংলাদেশ-আয়াল্যান্ডের চলতি টেস্ট ব্যাট-বলের দারুণ লড়াই শেষে পঞ্চম দিনে পা দিয়ে রেখেছে। এর আগে পাঁচ টেস্ট মিরপুর টেস্ট পঞ্চম দিনে গিয়েছিল। ২০২২ সালে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট। সব মিলিয়ে ২০২০ থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র তিন টেস্ট পঞ্চম দিনে গিয়েছে। বাকি সবগুলো চারদিনেই সমাপ্তি। জানিয়ে রাখা ভালো, প্রতিটি টেস্টেই ফল বেরিয়েছে। এই ম্যাচও ড্র হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
দিনে আজ হাইলাইট করার মতো পারফরম্যান্স বলতে ছিল, মুমিনুল হক ও সাদমান ইসলামের মিস। সাদমান ৬৯ ও মুমিনুল ১৯ রানে দিন শুরু করেছিলেন। দুজনের কেউই সেঞ্চুরি ছুঁতে পারেননি। সাদমান ৭৮ রানে ম্যাকব্রাইনের বল জোড়া পায়ে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন। এরপর অধিনায়ক নাজমুল ১ রানে নেইলের লাফিয়ে উঠা বলে ম্যাকব্রাইনের হাতে ক্যাচ দেন।
সেখান থেকে শুরু হয় মুমিনুল ও মুশফিকুর রহিমের লড়াই। ১২৩ রানের জুটি গড়েন দুজন। এ সময়ে মুমিনুল ফিফটির পর সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যান। মুশফিকুর ছুঁয়ে ফেলেন ফিফটি। শততম টেস্টে সেঞ্চুরির পর ফিফটি ছুঁয়ে রিকি পন্টিংয়ের পাশে জায়গা করে নেন মুশফিকুর। বাংলাদেশ অপেক্ষা করছিল মুমিনুলের সেঞ্চুরির। সিলেটে ৮২ এবং ঢাকায় প্রথম ইনিংসে ৬৩ রানে আউটের পর মুমিনুল একটি সেঞ্চুরি পাবেন প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু এবারও তিনি হতাশ করেন। সেঞ্চুরি থেকে ১৩ রান দূরে রাখতে লেগ স্পিনার হোয়ের বলে ক্যাম্পারের হাতে ক্যাচ দেন। তার আউটের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণা করে।
ততক্ষণে বাংলাদেশের লিড ৫০৮ রানের। আগের দিনের ১ উইকেটে ১৫৬ রানের সঙ্গে আজ ৩ উইকেটে ১৪১ রান জমা করে বাংলাদেশ। তাতে দ্বিতীয় ইনিংসে সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ২৯৭। ২১১ রানের লিডসহ আয়ারল্যান্ডকে ৫০৯ রানের বিশাল টার্গেট ছুঁড়ে দেয়।
বিশাল ওই টার্গেট তাড়া করতে নেমে তাইজুলের ৩টি, হাসান মুরাদের ২টি ও খালেদের ১ উইকেটে জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ। তাইজুল ৩ উইকেট নিয়ে দেশের টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় সাকিবকে পেছনে ফেলেছেন। ২৪৯ উইকেট নিয়ে তিনি আছেন শীর্ষে। সাকিবের উইকেট ২৪৬। ৫০ রান করে আইরিশদের হয়ে হ্যারি টেক্টর লড়াই করেছিলেন। কিন্তু মাইলফলক ছোঁয়ার পরই হতাশ করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
শেষ দিনে ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়ে আয়ারল্যান্ড চমকে দেয় কিনা দেখার। নয়তো বাংলাদেশ প্রত্যাশিত জয়ের অপেক্ষায়।