সারা বাংলা

‘নিখোঁজ’ প্রার্থীর ফোনালাপ ফাঁস: আত্মগোপন নাকি কৌশল

গত শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন বলে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন তার স্ত্রী মেহেরুন্নিছা। প্রায় তিন দিন পার হতে চললেও সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর ২টা পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজের বিষয়ে আশুগঞ্জ থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি— রাইজিংবিডিকে এমনটাই নিশ্চিত করেছেন আশুগঞ্জ থানার ওসি আজাদ রহমান।

তবে আবু আসিফ আসলেই নিখোঁজ নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে রয়েছেন— তা নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসিফের স্ত্রী এবং বাসার কেয়ারটেকারের মাঝে একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। যেখানে মেহেরুন্নিছা (আসিফের স্ত্রী) কেয়ারটেকারকে আসিফের জন্য জামা-কাপড় গোছানোর নির্দেশ দিতে শোনা যায়। সেখানে আসিফের স্ত্রী বলেন, ‘ইউসুফ (কেয়ারটেকার) স্যারের (আসিফ) কতগুলো জামাকাপড়, গেঞ্জি, প্যান্ট, শীতের কাপড়, জুতা-মোজা ব্যাগে ভরে দিয়ে দে তাড়াতাড়ি। আরে তাড়াতাড়ি দে। কেউ যেন না জানে, স্যার কই গেছে। ক্যামেরা বন্ধ করে দে। ক্যামেরার লাইন বন্ধ কর বাসার। স্যার গেলে আরও ১০ মিনিট পর ক্যামেরার লাইন বন্ধ করবে।’

এমন কথোপকথন ফাঁস হবার পর বিএনপি নেতা আসিফ ‘স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে’ গিয়েছেন বলেই ধারণা করছেন অনেকে।

পড়ুন- সাত্তারের আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ‘নিখোঁজ’

আবু আসিফ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা ও এই আসন থেকে পাঁচ বারের সাবেক সংসদ সদস্য বহিষ্কৃত উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। আবু আসিফ মোটরগাড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে, আবু আসিফ আহমেদকে উদ্ধারের জন্য মাঠ প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশনাও দিয়েছে সংস্থাটি।

পড়ুন- বিএনপির দলছুট সাত্তারকে ‘জেতানোর বার্তা’ দিলেন আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতা

নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের ইসি কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক জন প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য তদন্ত করতে বলেছি যে আসলে ঘটনাটা কী হয়েছে। তিনি নিখোঁজ কবে হলেন, কীভাবে হলেন, কী সমাচার- এ বিষয়গুলোই। আমরা একটা খবরে দেখতে পাচ্ছি যে উনাকে নাকি আটকে রাখা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা কতটুকু এটা জানার জন্যই তদন্ত করতে বলেছি। ডিসি, এসপি ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছি। আগে রিপোর্ট আসুক, তারপর সিদ্ধান্ত। আমাদের মতো করেই আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি যেভাবে হোক তাকে উদ্ধার করতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার করতে পারবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না।

পড়ুন- সাত্তারের বিরুদ্ধে নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থীর সহযোগী গ্রেপ্তার

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আন্তরিকতার সঙ্গে যেভাবেই হোক তাকে নির্বাচনের আগেই উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। সেটা যদি নির্বাচনের আগেই হয় তাহলে ভালো। কমিশন তো নিজে গিয়ে আনতে পারবে না। আমরা আমাদের দায়িত্বটা সম্পন্ন করে ফেলেছি। কড়াভাবে নির্দেশ দিয়েছি।’

এছাড়া আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান দুপুরে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রার্থী নিখোঁজ কিনা, সে বিষয়েও আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। এমনকি, আমাদের কাছে কেউ কোনও অভিযোগও করেনি।’

পড়ুন- সাত্তারকে ‘জেতাতে’ এবার সরে দাঁড়ালেন মৃধা

উল্লেখ্য, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করলে সম্প্রতি আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। এরপর নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল দিলে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আব্দুস সাত্তার ফের উপ-নির্বাচনের প্রার্থী হন। এরপর তিনি দল থেকে বহিষ্কার হন।

উপনির্বাচনের অন্য তিন প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- ‘নিখোঁজ’ আবু আসিফ আহমেদ, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাসানী ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম।