সাতসতেরো

দেখতে সবুজ বাঁশ ঘুঘু

ঢাকা বোটানিক্যাল গার্ডেনে পদ্মপুকুরের পাড় ধরে হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে একটা বাঁশ ঝাড়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। পাখির খোঁজে প্রায় তিন ঘণ্টা হাঁটার পর বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ফাঁকা বেঞ্চ পেয়ে বিশ্রামের জন্য বসলাম।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি; গরম পড়তে শুরু করেছে। দীর্ঘ সময় হাঁটার কারণে তেষ্টাও পেয়েছে। পানির বোতলের মুখ খুলতেই হঠাৎ নজর গেল চিড়িয়াখানাসংলগ্ন দেয়ালের পাশে সেগুন গাছের দিকে। সবুজ রঙের একটা পাখি গাছে বসা। নিজেকে সামলে নিয়ে ধীর পায়ে কয়েক হাত এগিয়ে গেলাম। গাছের ডালে দুটি পাখি দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল! এই প্রথম পাখিটির দেখা পেলাম। এরই মধ্যে একটা পাখি নিচে পানি খাওয়ার জন্য নেমে এসেছে।

ছবি তোলার তর সইছিল না! কিন্তু এ সময় কোনো অবস্থাতেই তাড়াহুড়ো করা যাবে না। একটু সময় নিয়ে পাখির ছবিগুলো তুললাম। পাখির নাম বাঁশ ঘুঘু। ছবি তুলে খুশী মনে বাড়ি ফিরে এলাম। পরে অবশ্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বেশ কয়েকবার এই পাখির দেখা পেয়েছি।

বাঁশ ঘুঘু Columbidae পরিবারের ২৭ সে.মি. দৈর্ঘ্যের এবং কমবেশি ১৩২ গ্রাম ওজনের সবুজ ডানার ছোট ভূচর পাখি। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারায় ভিন্নতা রয়েছে। ছেলে পাখির মাথায় ধূসর চাঁদি, সাদা কপাল ও ভ্রু রেখাসহ পিঠ জ্বলজ্বলে সবুজ রঙের। লেজ ও ওড়ার পালক কালো। মাথার পাশ ও দেহের নিচের দিকটা খয়েরি বা বাদামি বর্ণের। ছেলে ও মেয়ে পাখির দেহের নিচের দিকটা উষ্ণ বাদামি। এদের চোখ বাদামি। ঠোঁট লাল।

বাঁশ ঘুঘু শালবন, বাঁশবন ও বনপ্রান্তে বিচরণ করে। সচারচর একা বা জোড়ায় থাকে। মাটিতে হেঁটে হেঁটে খাবার খায়। খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঝরা ফল, বীজ, শস্যদানা ও উইপোকা। শত্রু দেখে ভয় পেলে মাথা ওঠা-নামা করে দ্রুত উড়ে ঘন জঙ্গলে ঢুকে যায়। বছরের ১২ মাস এরা প্রজনন করে। প্রজননকালে পুরুষ পাখি হু..হু...হু শব্দ করে গোঙানোর মতো ডাকে। বাঁশঝাড়, ছোট গাছে বা ঝোঁপের ভেতরে ডাল-পাতা দিয়ে এরা বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়ে পাখি ২-৩টি ডিম পাড়ে। উভয়ে ডিমে তা দিয়ে ১২ দিনে বাচ্চা ফোটায়। মা-বাবা দুজনে মিলে ছানাদের পরিচর্যা করে।

বাঁশ ঘুঘু বা সবুজ ঘুঘু বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট বিভাগের বনে পাওয়া যায়। ভারত উপমহাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃত রয়েছে।

বাঁশ ঘুঘু বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বণ্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত।

বাংলা নাম: বাঁশ ঘুঘু বা সবুজ ঘুঘু। ইংরেজি নাম: Grey-capped Emerald Dove, Emerald Dove, Asian Emerald Dove ev Green-winged Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম: Chalcophas indica

** বাইক্কা বিলের জলময়ূর

** নগরে পাকড়া খঞ্জন

** পাখির নাম হট্টিমা

** লালচে কাঠঠোকরার লুকোচুরি

** প্রথম দেখাতেই পাপিয়ার প্রেমে পড়েছিলাম

** অনেক কষ্টে পেলাম সাদা-কোমর মুনিয়ার দেখা

** হঠাৎ পেলাম নীলপরির দেখা