ঢাকা     রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

ঈশ্বরদীতে ঐতিহাসিক মাধপুর দিবস পালিত

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪২, ২৯ মার্চ ২০২৪  
ঈশ্বরদীতে ঐতিহাসিক মাধপুর দিবস পালিত

আজ ২৯ মার্চ ঈশ্বরদীর ঐতিহাসিক মাধপুর দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন ঈশ্বরদীর মাধপুর নামক বটতলায় প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলিতে ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। একই সঙ্গে ৫০ জন সাধারণ নিরীহ বাঙালি প্রাণ হারান।

১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ বাংলাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর শেষ সীমানা মাধপুরে বিপ্লবী জনতার আক্রমণ ও সম্মুখ যুদ্ধে সব পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছিল। শহিদ হয়েছিলেন ১৭ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ৫০ জন নিরীহ গ্রামবাসী। ওই দিনটির স্মরণে আজ শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেল পৌনে ৪টায় শহিদদের স্মরণ করে ঈশ্বরদী উপজেলার ঐতিহাসিক মাধপুর বটতলা সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরের বিজয়স্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর আগে, সম্মুখযুদ্ধে নিহত শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। 

অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদেন করেন- পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য গালিবুর রহমান শরীফ। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আকাল উদ্দিন সরদার, সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান ভোলা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সদস্য রোকনুজ্জামান শিহাব, সাহাপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান মিঠু, সাধারণ সম্পাদক কোহিদুল ইসলাম কুদ্দুস, সাহাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি খায়রুজ্জামান দিপু এবং সাধারণ সম্পাদক সুমন আলী ফকির প্রমুখ। 

এলাকাবাসী জানান, ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ সকাল ১১টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী ১১টি ট্রাকে অস্ত্রসজ্জিত সাজোয়া বহর নিয়ে মাধপুরের কাঁচা রাস্তা দিয়ে ঈশ্বরদীর দিকে আসছিল। তাদের রাজশাহীতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। ঈশ্বরদী, পাকশীর রূপপুর অঞ্চলের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে অসংখ্য যুবক মাধপুর বটতলা স্থানীয় গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে ফলা, বল্লম, লাঠি, নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন। পাক সেনাদের সাজোয়া বহরগুলো বাধার সম্মুখীন হয়। সেসসময় পাকিস্তানি সেনারা গুলি চালাতে শুরু করে। সেদিন মাধপুরের বিশাল বটগাছ ছিল ওই রণক্ষেত্রের কেন্দ্রভূমি। 

মূলত কোনো কমান্ড ও নেতৃত্ব ছাড়াই শুধুমাত্র দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রাজুসহ অনেকে। তাদের ছোঁড়া ককটেলে পাকিস্তানি সেনাদের জিপে আগুন ধরে যায়। ফলে কিছু পাক সেনা নিহত হন। পরে নিহতদের লাশ ট্রাকে তুলে পাক সেনারা আশেপাশের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং গুলি চালিয়ে সামনে অগ্রসর হতে থাকে। সেদিন প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও বীর-মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর নেতৃত্বে বীর-মুক্তিযোদ্ধা এবং গ্রামবাসীর সঙ্গে চলা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কেউ রাজশাহীতে অক্ষত অবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি। 

পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সেদিন সম্মুখ যুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছিলেন তারা হলেন- শহিদ হাবিবুর রহমান রাজু, আব্দুর রাজ্জাক, নুরুল ইসলাম, ওহিদুর রহমান, আব্দুল গফুর, নুরুল ইসলাম, আলী আহম্মদ, নবাব আলী, হামির উদ্দিন ও ফরমান সরদারসহ ১৭ জন বীর-মুক্তিযোদ্ধা ও ৫০ জন গ্রামবাসী।  

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে প্রতিবছর ২৯ মার্চ এলে সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর।  বর্তমানে সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। 

শাহীন/মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়