ঢাকা     রোববার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩১

অবিরাম বৃষ্টিতে উৎকণ্ঠা আলু চাষিদের

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৭:১১, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
অবিরাম বৃষ্টিতে উৎকণ্ঠা আলু চাষিদের

গতকাল বুধবার দিনভর কয়েক দফা গুড়িগুড়ি বৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোর থেকে মুন্সীগঞ্জে অবিরাম গতিতে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছেন আলু চাষিরা। আলু জমিতে পানি জমার আশঙ্কায় জমির আইল কেটে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।

মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলায় এ বছর মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করেছে কৃষক। বাকি জমিতে আবাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জানা গেছে, আলু রোপণের আদর্শ সময় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত। সেই আদর্শ সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তাই কৃষকরা এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক জমিতে ইতোমধ্যে আলু রোপণ করে ফেলেছেন। ঘুর্ণিঝড় মিগজাউমের সংবাদ শুনে অনেকে জমি তৈরি করার পরেও অপেক্ষায় ছিলেন। বৃষ্টিপাত হয় কিনা সে আশঙ্কায় তারা আলু রোপণ করেননি।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে মুন্সীগঞ্জ ঠিকই অবিরাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগে ঘুর্ণিঝড় মিধিলির কারণে জমিতে পানি জমে অনেক কৃষকের রোপণ করা আলু বীজ নষ্ট হয়। পরে আবার তারা জমি প্রস্তুত করে আলু আবাদ করেছেন। এখন এই বৃষ্টি যেন কৃষকের মড়ার উপরে খাড়ার ঘাঁ।

মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গিবাড়ী ও সিরাজদিখান উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার থেকে বন্ধ রয়েছে কৃষকের আলু আবাদের কাজ। যে বিলগুলোতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছিলো, সেখানে এখন  শ্রমিক শূন্য। কৃষক নিজেই কোদাঁল নিয়ে জমিতে জমিতে ঘুরছেন আইল কেটে পানি নামানোর নালা করার জন্য।

বুধবার সন্ধার দিকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহি এলাকার বিলে আলুর জমিতে আইল কেটে নালা তৈরি করছিলেন শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, এ বছর ৭০ শতাংশ জমি আলু রোপণ করার জন্য প্রস্তুত করছি। এ পর্যন্ত ২১ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করছি। বাকি জমিগুলোও প্রস্তুত করে রাখছি। এতোদিনে আলু রোপন করে ফেলতাম। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ শুনতেছিলাম আবারো ঘুর্ণিঝর হইবো। তাই আলু রোপণ করিনি। ঘূর্ণিঝড় না হলেও যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তাতে মনে হয় এ বছর আর বাকি জমিতে আলু রোপণ করতে পারমু না। যেটুকু লাগাইছি সেই জমিতে যাতে পানি না জমে তাই নালা কেটে দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, এ বছর সার, আলু বীজ, জমি জমা সবকিছুর দাম বেশি। যে জমিগুলোতে আলু রোপণ করিনি, সেগুলোতেও সার ছিটিয়ে রাখছি। এখোন আলু লাগাতে না পারলে আমার সব লস হইবো।

সিরাজদিখান উপজেলার তেলির বিল গ্রামের কৃষক রহমান শেখ বলেন, আমি এবার পাঁচকানি ( ৭০০ শতাংশ) জমিতে আলু রোপণ করেছি। এখন যেভাবে বেশি বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তাতে আমার রোপণ করা বীজ একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে। পুনরায় আলু রোপণ করতে হবে। এতে আমার লাখ লাখ টাকা লোকসান হবে।

গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামের কৃষক মো. জসিম উদ্দিন প্রধান বলেন, এ বছর মিথিলির আগে আড়াইকানী জমিতে আলু রোপণ করেছিলাম। কিন্তু মিথিলির সময় বৃষ্টির পানি জমে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে লাগাইছি। আবারো যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে মনে হয় সব পচেঁ আবারো নষ্ট হবে।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, বুধবার পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ জেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়ে গেছে। এ বছর মুন্সীগঞ্জ জেলার মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু। বাকি জমিগুলোতে আলু আবাদের প্রস্তুতি চলছে।

তিনি বলেন, আলু চাষের উত্তম সময় নভেম্বর মাস। তবে এ বছর কিছুদিন আগে ঘুর্ণিঝড় মিধিলি আঘাত হানায় আলু আবাদ বিলম্বিত হয়েছে। এখন আবার বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে আলু চাষ আরও বিলম্বিত হবে।

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়