ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খুলনা নগর উন্নয়নে নাগরিকদের ৩২ প্রত্যাশা 

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ৯ জুন ২০২৩  
খুলনা নগর উন্নয়নে নাগরিকদের ৩২ প্রত্যাশা 

নাগরিক সংলাপ। ছবি: রাইজিংবিডি

সবার জন্য একটি নাগরিকবান্ধব খুলনা মহানগরীর লক্ষ্যে ‘নাগরিক প্রত্যাশা’ প্রকাশ করা হয়েছে। ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে ‘স্ট্রেংথেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ’ প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল একটি নাগরিক সংলাপের মাধ্যমে নাগরিকদের এই প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরেন।

বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী নগরীর ক্যাসেল সালাম-এ এই প্রত্যাশা প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে নাগরিকরা ছয়টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ৩২টি প্রত্যাশা উপস্থাপন করেন, যা নগর পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র এবং কাউন্সিলররা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পূরণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়।

খুলনা মহানগরের নাগরিকরা, বিশেষ করে যুব, নারী এবং প্রান্তিক জনগণ আরও সার্বজনীন এবং দায়িত্বশীল সিটি কর্পোরেশন প্রত্যাশা করেন।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাল্টি পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম (এমএএফ) এর সভাপতি ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জোবায়ের আহম্মেদ খান জবা।

বক্তব্য রাখেন সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক আনোয়ারুল কাদির, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সমন্বয় সংগ্রাম কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান, খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেহানা ইসা, খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহসভাপতি মো.  রিয়াজ উদ্দিন, খুলনা বিভাগীয় উইমেন চেম্বার ও কমার্স এর সভাপতি শামীমা সুলতানা শিলুসহ খুলনার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতাধিক প্রতিনিধি।

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় সিনিয়র ম্যানেজার রুয়ায়েত হাসান ও সিনিয়র কমিউনিকেশনস ম্যানেজার আরাফাত আলী সিদ্দিক।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাল্টি পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম খুলনার সদস্য ও সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান। 

নগরীর নিরাপত্তা, নারী, যুব ও শিশু-বান্ধব নগরী, সুবিধাবঞ্চিত এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত নগরী, টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ ও নগর পরিচালনায় দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ বিভিন্ন বিষয়ে নাগরিক প্রত্যাশাগুলো অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়। নাগরিক প্রতিনিধিদের মধ্যে এই প্রত্যাশাগুলো তুলে উপস্থাপনা করেন, পিস ক্লাবের সভাপতি আলভী শেখ, সিআরসির সভাপতি রিয়াজ রহমান শুভ ও সদস্য নুরজাহান, প্রথম আলো বন্ধু সভার সভাপতি এস এম মাসুম বিল্লাহ ও সদস্য ঋষিতা আক্তার রিতা, রংমহল’র সভাপতি সাবিনা আক্তার, টিআইবি ইয়েস গ্রুপের সভাপতি সিলমি সাদিয়া ও সদস্য জয়দ্রত শীল এবং বিডি ক্লিন খুলনার রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর তিমির মজুমদার।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক প্রতিনিধিরা সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে মূলত নিম্নলিখিত প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরেন- 

নগরীর নিরাপত্তার স্বার্থে : 
•    শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা।
•    অপরাধ জগতে উদিয়মান কিশোর গ্যাংদের কর্মকাণ্ড রোধে, বিশেষ করে ভুক্তভোগী নারী ও কন্যাশিশুদের সহায়তার জন্য নগরকেন্দ্রিক একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা।
•    নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা, রাস্তাঘাটে নারীদের উত্যক্ত করার প্রতিরোধে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি গঠন করা।
•    যুবসমাজকে মাদকাসক্তি থেকে বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
•    নারী ও শিশু পাচার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

নারী, যুব ও শিশু-বান্ধব নগরী গড়ে তুলতে : 
•    নারী-বান্ধব একটি পরিকল্পিত নগর স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে নারীদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা সহজে পাওয়া যাবে।
•    নগরে সব ব্যস্ততম স্থানে নারীদের জন্য পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা।
•    ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য সিটি কর্পোরেশনের ওয়ান-স্টপ-সার্ভিস চালু করা, যা বিদ্যমান নানা সরকারী সংস্থার ছাড়পত্রের ভোগান্তি দূর করবে।
•    যুব ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নগরীতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা।
•    যুব, নারী ও শিশুদের জন্য নগরীতে আলাদা খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা। 
•    যুবসমাজকে মাদকাসক্তি থেকে বাঁচাতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা।
•    ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসাবান্ধব প্রকল্প গ্রহণ করা।
•    পথশিশুদের জন্য পরিচর্যা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা।

সুবিধাবঞ্চিত এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর : 
•    সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক পাবলিক টয়লেট এবং যাত্রী ছাউনি স্থাপন করা।
•    সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা।
•    বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম স্থাপন করা।
•    সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সহজলভ্য সেবা নিশ্চিত করা।
•    বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য সিটি কর্পোরেশনের সেবা পেতে (যেমন, পাবলিক টয়লেট, গণপরিবহণ, বাজার) সমান পরিবেশ নিশ্চিত করা।
•    বস্তিবাসীদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করা।

নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত নগরীর জন্য : 
•    নাগরিকদের অংশগ্রহণে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
•    বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য আলাদা টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
•    পরিকল্পিত ও নিরাপদ গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
•    সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের দুর্নীতি দূর করা।
•    নগরীর পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্থাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
•    পথচারীদের জন্য নিরাপদ সড়ক পারাপার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে : 
•    অবকাঠামোগত উন্নয়নের সময় জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে নিয়ে ওয়াসা, কেডিএ, সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা।
•    অবকাঠামোগত উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব উচ্চমানের সামগ্রীর ব্যবহার নিশ্চিত করা।
•    অবকাঠামো উন্নয়নে দুর্নীতি বন্ধ করা।

নগর পরিচালনায় দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে : 
•    ওয়ার্ডভিত্তিক বাজেটের বরাদ্দ ও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জনগণের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় গড়ে তোলা।
•    উন্নয়ন প্রকল্পে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে ওয়ার্ড ভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
•    বিভিন্ন সেবাদাতার সংস্থার সেবার তালিকা হালনাগাদ করা ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা।
•    নগর উন্নয়নে স্থায়ী কমিটিগুলিকে কার্যকর করা এবং স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নাগরিক প্রতিনিধিদের নিযুক্ত করতে হবে।
•    তথ্য অধিকার আইনের অধীনে আবেদনকৃত তথ্য যথাসময়ে সরবরাহ করা।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন শেখ সাদী, মেহেদী হাসান দিপু, অ্যাডভোকেট রওগণ আরা, এস এম মুরশিদ হাসান লিটন প্রমুখ।

/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়