দেরিতে আসায় খোলা হয়নি গেট, আকুতি করেও দেওয়া হলো না পরীক্ষা

মুন্সীগঞ্জ সদরের মিরকাদিম পৌরসভার প্রকাশ মণ্ডলের (২৯) ইচ্ছে ছিল শিক্ষক হওয়ার। স্বপ্ন পূরণে শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে উপস্থিত হন মুন্সীগঞ্জের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) কেন্দ্রে। আসার পথে বিলম্ব হয় তার। সকাল ৯টা ৩০মিনিটের মধ্যে কেন্দ্রে থাকার কথা থাকলেও ৯টা ৩৫ মিনিটে উপস্থিত হওয়ায় প্রবেশাধিকার পাওয়া হয়নি আর। বারবার চেষ্টা করে এবং বিভিন্নভাবে আকুতি করলেও গেট খোলা হয়নি।

শুধু প্রকাশই নয়, আজ প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষায় বিলম্বে উপস্থিত হওয়ায় পরীক্ষা দিতে পারেনি আরও অনেক পরিক্ষার্থী।  

শহরের দেওভোগ থেকে ৯টা ৪০মিনিটে উপস্থিত হওয়া সাজ্জাদ হোসেন (২৭), চরকেওয়ার ইউনিয়ন থেকে ৯টা ৪৫মিনিটে আসা মো. রফিকুল ইসলাম, লৌহজং থেকে আসা সুমনসহ (৩০) কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গেটে আকুতি করতে দেখা যায়। পরীক্ষা দিতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পরেন তাদের কেউ কেউ। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েকজন অভিভাবকদেরও আকুতি করতে দেখা যায়।

পরীক্ষার্থী প্রকাশ মণ্ডল বলেন, রাস্তায় গাড়ির কারণে মাত্র পাঁচ মিনিট দেরিতে পৌঁছাই। আমাকে পরীক্ষায় বসার সুযোগটি দিতে পারতো তারা। অনেকবার গেটে আকুতি করলেও কারো সাড়া পেলাম না। অনেক পরীক্ষার্থী কিছুটা দেরিতে আশায় তাদেরও পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। 

১০মিনিট বিলম্বে ৯টা ৪০মিনিটে উপস্থিত হওয়া রনী ঘোষের (৩০) এটি চাকরি পাওয়ার শেষ বছর। তাই শেষ চেষ্টা করার জন্য এসেছিলেন তিনি। পথে কিছুটা দেরি হওয়ায় তারও কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরি হয়। ফলে তিনিও পরীক্ষা দিতে পারেননি। রানী ঘোষ বলেন, পরীক্ষা দিতে পারলে উত্তীর্ণ হতে পারতাম। চাকরি করে পরিবারকে কিছুটা হলেও আর্থিক সহযোগিতা করতে পারতাম।

আরো কয়েকজন পরিক্ষার্থী জানান, নানা কারণেই তাদের কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে এমন হবে জানলে আরো আগেই উপস্থিত হওয়ার কথা জানান তারা।

এবিষয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (শিক্ষা শাখা ও আইসিটি শাখা) মুনতাসির মাহফুজ বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল সকাল ৮টা ৩০মিনিটে পরীক্ষার্থীদের আসন গ্রহণ ও সকাল সাড়ে ৯টায় প্রবেশাধিকার বন্ধের। নির্দেশনা অনুযায় ৯টা ৩০মিনিটে গেইট বন্ধ করা হয়।  

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের শিক্ষক পদ একটি দায়িত্বশীল জায়গা। যারা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে তাদের সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন করা উচিত। সময়মত কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়টিও একটি পরীক্ষা ছিল। তাই বিশৃঙ্খলা এড়াতেই নির্ধারিত সময়ের পর কাউকে আর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবার মুন্সীগঞ্জ জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ৬ হাজার ৫৭ জন পরিক্ষার্থী ছিলেন। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত জেলার ৯টি কেন্দ্রে লিখিত পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।