রমজানে তাদের প্রতিজ্ঞা ‘ক্ষুধা নিবারণ’

অন্যরকম এক প্রতিষ্ঠান ‘ক্ষুধা নিবারণ’। কয়েকজন স্বপ্নবাজ মানুষের গল্প। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চাঁদ আবাসিক এলাকায় বি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৪১/৩৯ নম্বর বাড়ির নিচতলা থেকে বিভিন্ন পেশার সমমনা কয়েকজন মিলে শুরু করেন এর কার্যক্রম। তাদের কার্যক্রমের প্রতিজ্ঞাতেই রয়েছে ‘ক্ষুধা নিবারণ’।
শুরুটা ২০২১ সালে। সেবছর পুরো রমজানে মানুষকে ইফতারি বিতরণ করে তারা। রোজা শেষে মাসের প্রতি শুক্রবার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ৩০০-৪০০ মানুষের মধ্যে চাল-ডাল-তেল-লবণ বিতরণ করা হয়ে আসছিল। এভাবে পুরো বছর চলার পর একইভাবে ২০২২ সালের রোজায় তারা ইফতার বিতরণ করে।
এবারও যথারীতি রমজানের সময় প্রতিদিন ইফতার বিতরণের কাজটি চালাতে থাকেন ক্ষুধা নিবারণ সংশ্লিষ্টরা। এখানে ইফতার করার জন্য ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা রমজানের প্রতিদিনই আসেন। তাও আবার এক দুজন নয়, ৫০০ থেকে ৬০০ জন। এসব মানুষদের আপ্যায়নেরও কোনও কমতি হয় না। ইফতারের ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকেই তাদের প্রত্যেকের হাতে পরম যত্ম নিয়ে ইফতার তুলে দেন উদ্যোক্তা-স্বেচ্ছাসেবীরা। একদল মানুষ মিলে এমন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তৈরি করেছেন মানবতার এক অনন্য উদাহরণ।
এ বছরও পূর্ণদ্যোমে চলছে তাদের কার্যক্রম। নিজেদের সঞ্চিত অর্থ, বন্ধু-স্বজনের সহায়তা নিয়ে মানুষরা রোজার শুরু থেকে আবার শুরু করেছেন ইফতার বিতরণ। প্রতিদিন এই মেহমানখানায় ইফতার করতে আসা প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ছোলা-মুড়ি-খেজুর-জিলাপির প্লেট। বিকেল ৪টা থেকে আসতে থাকেন মানুষজন। নিয়ে যাচ্ছেন ইফতার নিজের ও পরিবারের অন্যদের জন্য।
এখানে প্রতিদিন ইফতার করতে আসেন বিভিন্ন বাড়ির দারোয়ান, গৃহকর্মী, নিম্ন আয়ের মানুষ, রিকশা-অটো চালক, সবজি বিক্রেতা এবং ছোট ছোট বিভিন্ন পেশার মানুষেরা। প্রথমত আশপাশের লোকজন আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে আসা মানুষের সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকে। এখন প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষের বেশি মানুষ ইফতার করতে আসেন। আর এসব মানুষের হাতে ইফতার তুলে দিতে পেরে দিনশেষে তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরে যান উদ্যোক্তারা।
২০ জনের একটি দল। যাদের মধ্যে রয়েছেন সাদিয়া ইসলাম হিরা, মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, সুমন তরফদার, মাহমুদ-উল-হাসান, অ্যাড. রকিব হাসান, শামীম আহমেদ, উত্তম সরকার, মো. ইকরামুজ্জামান, স্বদীপ মণ্ডল, মো. মাজহারুল ইসলাম, মো. শাহ জামাল, মো. রফিকুল ইসলাম, কাজল মাহমুদ, মো. আফজালুল হক, মেসবাহ য়াযাদ, মো. সেলিম কাজী, চাঁদনী আফরোজ, কহিনুর ইসলাম, সৈয়দ আনোয়ারুল হক ও মনিরুজ্জামান ডালিম।
এদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, গৃহিণী, ডাক্তার, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তারা সবাই বন্ধু-স্বজন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চাঁদ আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর রোডে একটা ভাড়া বাড়ির নিচতলা থেকে কিছু মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন এসব স্বপ্নবাজরা। মানুষের জন্য ভালো কিছু করার তাড়না থেকেই ওদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন পরিচিত, আত্মীয় আর বন্ধুরা। নিজেদের সঞ্চিত টাকা, আত্মীয়-পরিজনদের সহযোগিতা দিয়ে চলে এদের এই মানবিক কার্যক্রম। আর এই কাজটি লম্বা সময় ধরে করতে চান এসব মানুষেরা।
ঢাকা/এনএইচ