দুদকে আসেননি বেনজীরের স্ত্রী-কন্যা
মতিউর-বেনজীরের বিষয়ে চাপ নেই: দুদক সচিব

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলেও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হননি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও দুই কন্যা। সোমবার (২৪ জুন) দুদকে হাজির হয়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথা ছিল তাদের। তারা সময় বাড়ানোর আবেদনও করেননি। বরং, গত বৃহস্পতিবার আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়ে তারা তাদের বক্তব্য জানিয়েছেন।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-কন্যাকে দুই দফা নোটিস দেওয়ার পরও দুদকে হাজির না হওয়ায় এখন দুদক আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদকের অনুসন্ধান দল বেনজীরের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এ বিষয়ে সোমবার (২৪ জুন) দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, আজ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তার স্ত্রী ও দুই কন্যার ব্যক্তিগত শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু, তারা দুদকে উপস্থিত হননি। তারা সময় বাড়ানোর আবেদনও করেননি। তারা দুদক চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে তারা তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। এই আবেদন সাবেক আইজিপি বেনজীরের আবেদনের সঙ্গেই দেওয়া হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার।
তিনি বলেন, সাবেক আইজিপি ও তার পরিবারের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানকারী টিম এখন দুদক আইন, ২০০৪ ও ২০০৭ বিধিমালা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নির্ধারিত সময়ে টিম এ বিষয়ে কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
পরবর্তী আইনি কার্যক্রম কী হবে, জানতে চাইলে দুদক সচিব জানান, অনুসন্ধানকারী টিমের সুপারিশ অনুযায়ী বলতে গেলে, অন্যদের ক্ষেত্রে আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী যা করা হয়, তা-ই করা হবে।
চাকরিকালে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাবেক বেনজীর আহমেদকে রোববার (২৩ জুন) দুদকে ডাকা হয়।
এর আগে বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৬ জুন তলব করে দুদক। বেনজীরের স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন তলব করা হয়। কিন্তু, তারা নির্ধারিত সময়ে হাজির না হওয়ায় তারিখ পরিবর্তন করা হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ সপরিবারে বিদেশে রয়েছেন। তারা এখনো দেশে ফেরেননি।
মতিউর-বেনজীরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের বিষয়ে চাপ নেই, মতিউরের বিষয়ে অগ্রগতি:
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও ছাগলকাণ্ডে আলোচিত এনবিআর সদস্য মতিউরের মতো ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান নিয়ে কোনো মহলের চাপ আছে কি না, জানতে চাইলে দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন বলেন, দুদক স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও এনবিআর সদস্য মতিউরের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধান নিয়ে কোনো ধরনের চাপ নেই, চাপ আসছেও না। আমরা যে দুটি আইন ও বিধিমালার কথা উল্লেখ করেছি, তার আলোকেই এই দুজনের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলবে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে যেভাবে কার্যক্রম চলে, এ দুজনের ক্ষেত্রেও তা-ই হবে। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না।
মতিউরের বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো অগ্রগতি আছে কি না, জানতে চাইলে দুদকের সচিব বলেন, মতিউরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছেন। এ পর্যায়ে এই অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো, মতিউর ও তার পরিবার যাতে বিদেশ চলে যেতে না পারে, আমাদের অনুসন্ধানকারী টিমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মতিউর ও তার পরিবারের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার আওতায় মতিউর, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব রয়েছেন।
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব রোর্ডের সদস্য মো. মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের বিষয়ে মতিউরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে গত ৪ জুন তিন সদস্যের একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। দুদকের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন—সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান ও উপ-সহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার।
নঈমুদ্দীন/রফিক