ঢাকা     রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

যেসব বার্তা দিয়ে গেলো মার্কিন প্রতিনিধিদল

কূটনৈতিক প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
যেসব বার্তা দিয়ে গেলো মার্কিন প্রতিনিধিদল

ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো ঢাকা সফর করেছে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। বর্তমান সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করার বার্তার পাশাপাশি সফরে কিছু বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

২৪ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

উচ্চপর্যায়ের এই মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরে বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে নতুন অধ্যায় শুরু নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদলের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

প্রতিনিধিদলটির সাথে বৈঠক পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একটি বড় উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র। দুই দেশের সম্পর্কে নতুন অধ্যায় শুরু নিয়ে, এই সম্পর্ককে কিভাবে আরও গভীর করা যায়, সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে প্রতিনিধিদল বৈঠক করেন। প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকের বিষয়ে উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সেই সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, শ্রম পরিবেশ উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে চায় দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তাদের ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স প্রোগ্রামে (ডিএসপি) যুক্ত করতে চায়। এজন্য তারা কয়েকটি শর্তের কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্র শর্তগুলো শিগগিরই জানাবে। প্রতিনিধিদলের সফর বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায় বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সফরে দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করা এবং বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

এর বাইরে ঢাকা সফরকালে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদল যেসব বার্তা দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু, শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়ন, মানবাধিকার ইত্যাদি। এছাড়া বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিএনপির নেতাদের কারাগারে থাকার বিষয়টিও স্থান পায়।

এসব বিষয়ে সোমবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রতিনিধিদলটির সাথে আমার প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠক হয়েছে। আমাদের মধ্যে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় আরোহনের বিষয়েই আলাপ করেছি।

ঢাকা সফরকালে মার্কিন প্রতিনিধিদল পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

ঢাকা সফরকালে মার্কিন প্রতিনিধিদল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।

বৈঠকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক দৃশ্যপট ও কারাগারে থাকা বিরোধীদলের হাজার হাজার কর্মীর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনে এ সম্পৃক্ততা চলমান থাকবে।

ঢাকা সফরকালে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন মার্কিন প্রতিনিধিদল।

মার্কিন ডেপুটি চিফ অব মিশন হেলেন লাফেভের বাসভবনে ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে অংশ নেন-অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাংবাদিক জিল্লুর রহমান, অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. আমেনা মহসিন, মানবাধিকারকর্মী শিরিন হক প্রমুখ।

বৈঠকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।

মার্কিন প্রতিনিধিদল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় একযোগে কাজ করার বিষয়ে জোর দেন।

মার্কিন প্রতিনিধিদল শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করেছেন।

মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরের বিষয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছিল- ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির জন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে প্রতিনিধিদল আলোচনা করবেন। মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নেওয়া, মানবাধিকারকে সমর্থন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আন্তর্জাতিক হুমকির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক সহনশীলতার শক্তিকে এগিয়ে নিতে এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রচারে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের পক্ষে বিভিন্ন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লাউবেখার, উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার ও ইউএসএআইডির সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার।

/হাসান/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়