ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যত্রতত্র বর্জ্য: স্মার্ট দেশের মানুষ স্মার্ট হবেন কবে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৫, ১৭ জুন ২০২৪   আপডেট: ২২:০৮, ১৭ জুন ২০২৪
যত্রতত্র বর্জ্য: স্মার্ট দেশের মানুষ স্মার্ট হবেন কবে

রাজধানীজুড়ে পশু কোরবানি শেষে বর্জ্য যত্রতত্র ফেলেছেন অনেকে। অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়কে বর্জ্যের স্তূপ। বর্জ্য অপসারণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অনেক স্থানে রয়ে গেছে আবর্জনা। প্রশ্ন উঠছে, স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিকরা স্মার্ট হবেন কবে? 

প্রায় ৯ বছর আগে পরিবেশের সুরক্ষায় নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে দুই সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু, তাতে খুব একটা সায় দেয়নি নগরবাসী। ২০২১ সালের পরে এ বিষয়টি আর এগিয়ে নেয়নি সিটি কর্পোরেশন। তবে, কেউ চাইলে নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করতে পারেন। 

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট, মল-মূত্র, খড়কুটো—সব এক জায়গায় জড়ো করে রাখা হয়েছে। রাস্তায় দুই পাশজুড়েই এই অবস্থা। তাতে কোনো প্রকার ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয়নি। মাছি উড়ছে, গন্ধ ছড়াচ্ছে, রক্তে বয়ে যাচ্ছে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে খোদ নগরবাসীই। তারা বলছেন, পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে বিকল্প পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন না এলে এভাবেই চলতে থাকবে। সেই সঙ্গে আইনের প্রয়োগের কথাও বলেন তারা।  

সবাইকে নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, এবার ৬ ঘণ্টার মধ্যেই অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক পর্যন্ত সব জায়গা পরিষ্কার করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা একটি পরিষ্কার নগরী উপহার দেবো। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমাদের কমিশনাররা মাঠে নেমে গেছেন। সবাইকে নিয়ে আমরা খুব দ্রুতই বর্জ্য অপসারণ করতে পারব বলে আশা করি। 

ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মোস্তফা মনি। এবার গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে ঢাকায় ঈদ করছেন। এই পরিবেশ দেখে খুবই বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি।

মোস্তফা মনি বলেন, এর পরিবর্তন জরুরি। এটা পরিবেশদূষণ। আপনি দেশের উন্নয়ন চাইবেন, কিন্তু মানসিকতার উন্নয়ন করবেন না, সেটি হতে পারে না। সরকারের উচিত নিয়ম করা। আর সেই নিয়ম না মানলে আইন প্রয়োগ করা উচিত। 

সৌদি আরব থেকে সম্প্রদি দেশে আসা মিল্লাত হোসেন যেখানে-সেখানে পশু জবাই দেখে আফসোস করে বলেন, সৌদি আরবে অনেক বেশি পশু কোরবানি হয়, কিন্তু সেগুলো নিয়ম মেনে করা হয়। কেউ যত্রতত্র কোরবানি করেন না। সেখানে আইন খুব কড়া। আমাদের দেশের মানুষ যদি নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি করতেন, পরিবেশ রক্ষা পেতো। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার রাজধানীর কয়েকটি মহল্লায় নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখানে মহল্লাবাসীর সঙ্গে আগেই যোগাযোগ করে পশু কোরবানিও করা হয়েছে। 

নিজের বাসার সামনে পশু জবাই করছিলেন খায়রুল খোন্দকার। তিনি বলেন, মূলত, বাড়ির সামনে পশু কোরবানি দিলে সবাই দেখতে পায়। ছেলেমেয়েরা আনন্দ পায়। তাছাড়া, মাংস টানাটানির সমস্যা নেই। এজন্য বাড়ির সামনে পশু কোরবানি দিয়েছি। 

বনশ্রীর বাসিন্দা খসরু বাড়ির সামনেই একটি ছাগল ও একটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। আবার বাড়ির সামনেই পশুর বর্জ্য স্তূপ করে রেখেছিলেন। সেখান থেকে বিকট গন্ধ আসছে দেখে সেগুলো আবা টেনে প্রধান সড়কে নিয়ে ফেলেছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পরেই সিটি কর্পোরেশনের লোক এসে নিয়ে যাবে। খুব সমস্যা হবে না।   

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন মিলে পশু জবাইখানা রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে তিনটিই বন্ধ। যে দুটি চালু রয়েছে, সেগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। ফলে, আধুনিক জবাইখানা এখনো কেবল ঘোষণা হয়েই আছে। মোহাম্মদপুর এলাকায় কৃষি মার্কেটের পাশে ডিএনসিসির পশু জবাইখানা ব্যবহার উপযোগী নয়। মিরপুর-১১ এর নিউ মার্কেট সোসাইটি মার্কেটে ডিএনসিসির জবাইখানার অবস্থাও একই রকম। মহাখালীতে আরেকটি জবাইখানা থাকলেও সেটি অচল। দক্ষিণ সিটির আওতাধীন হাজারীবাগের গজমহল ও কাপ্তানবাজারে দুটি জবাইখানা নির্মাণ করলেও সেগুলো এখনও চালু হয়নি। এসব জায়গায় পশু আনতে নগরবাসীর অনীহার কারণে সিটি কর্পোরেশন থেকেও তেমন আগ্রহ দেখানো হচ্ছে না। 

পারভেজ/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়