ঢাকা     সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

সাতক্ষীরায় সূর্যমুখী চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১০, ৬ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৩:১৪, ৬ মার্চ ২০২৪
সাতক্ষীরায় সূর্যমুখী চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা

উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় সূর্যমুখী চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। স্বল্প সময়ের তেলজাতীয় ফসল সূর্যমুখী উৎপাদন করে কৃষক লাভবান হতে পারে। আর এ লক্ষে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলে জলাবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প গ্রহণ করেছে কৃষি বিভাগ। এই প্রকল্পের অধিনে জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় ১৩৮ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১২ হেক্টর, কলারোয়ায় উপজেলায় ৪৫ হেক্টর, তালা উপজেলায় ২০ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ১১ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ১৬ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১৭ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৭ হেক্টর। তবে গেল বছর জেলায় এ ফসলটি চাষ হয়েছিল ১৪৯ হেক্টর জমিতে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ওলিউর রহমান জানান, চলতি রবি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে হাইসান জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ক্ষেতের অধিকাংশ গাছেই ফুল খুবই বড় বড় হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে সূর্যমুখী ভাঙ্গতে পারবেন তিনি। এর আগে, প্রণোদনা হিসেবে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার সংগ্রহ করেন।

গত মৌসুমে একই পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে ১৮ হাজার টাকা লাভ হয় ওলিউরের। আগামীতে প্রণোদনার পাশাপাশি নিজে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করবেন তিনি।

পার্শবর্তী লাবসা এলাকার শহিদুল ইসলাম জানান, পরীক্ষামুলকভাবে দেড় বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। গাছে সূর্যমুখী ফুলের যে ধরন দেখা যাচ্ছে, তাতে ৮ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত উৎপাদন হতে পারে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) সাতক্ষীরা বিনেরপোতাস্থ কার্যলয়ের দায়িত্বরত উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শিমুল মণ্ডল বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য সূর্যমুখী খুবই লাভজনক ও সম্ভাবনাময় একটি ফসল। কারণ এটি মাটির লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। বারি বা হাইসান জাতের সূর্যমুখী চাষ করে সাতক্ষীরা অঞ্চলের কৃষক লাভবান হতে পারে।

তিনি বলেন, লবণাক্ত এলাকায় সূর্যমুখী হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩-৪ টন পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব। তবে কিছু সমস্যাও রয়েছে। যেমন- সূর্যমুখী ফুল বড় হলে টিয়া পাখির উৎপাত বেড়ে যায়। কিন্তু নেট দিয়ে চাষ করতে পারলে পাখির উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাছাড়া সূর্যমুখী থেকে তেল তৈরিতেও কিছু প্রযুক্তিগত জটিলতা রয়েছে। সূর্যমুখী থেকে বিশুদ্ধ তেল উৎপাদন করতে যে প্রযুক্তির দরকার, তা সাতক্ষীরায় নেই। যে কারণে কৃষকরা ফল ভেঙ্গেই বিক্রি করে দেন। এতে তাদের লাভের পরিমাণটা কমে যায়।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সূর্যমুখী চাষে ব্যাপক সম্ভবনাময় সাতক্ষীরা জেলা। স্বল্প সময়ে বেশি লাভজনক ফসল এটি। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে তেলজাতীয় ফসল সূর্যমুখী উৎপাদন বাড়াতে কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে উপকুলীয় এলাকার পতিত জমিতে এটি চাষ করে লাভবান হতে পারবে কষৃক। তাছাড়া আমাদের দেশে ভোজ্য তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে সাতক্ষীরা অঞ্চলে জলাবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের অধিনে জেলায় ১ হাজার ৫০ জন প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সূর্যমুখী বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। জনপ্রতি কৃষক এক বিঘা পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করতে পারবে।

/শাহীন/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়