ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৬ ১৪৩১

দৈনন্দিন জীবনে এআই প্রযুক্তির সুফল ও কুফল

মো. সোহান হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৫, ১২ জুন ২০২৪  
দৈনন্দিন জীবনে এআই প্রযুক্তির সুফল ও কুফল

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝায়, মানুষের বুদ্ধি কৃত্রিম উপায়ে বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপস্থাপন করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথম ব্লেচলে পার্কে অ্যালান টুরিং এ নিয়ে কাজ শুরু করেন। তার যুগান্তকারী কাজ কম্পিউটার বিজ্ঞানের কিছু মৌলিক বিষয় বিকাশে সহায়তা করেছে।

১৯৫০ এর দশকে টুরিং মনে করেন যে মেশিনগুলো নিজেদের জন্য চিন্তা করতে পারে কি-না। ১৯৯০ এর দশকের শেষ ও ২০০০ এর গোড়ার দিকে গবেষণায় একটি পুনরুত্থান চিহ্নিত করে, যা উন্নত অ্যালগরিদম, কম্পিউটিং শক্তি বৃদ্ধি ও বড় ডেটার আবির্ভাব করে। তারপরে ক্ষেত্রটি নিয়ে ক্রমাগত গবেষণার পর ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (AGI) সব মানুষের জন্য উপকারী কিনা, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘ওপেন এআই’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

অনেক গবেষণার পর সবশেষে গবেষকরা জিপিটি-১ (২০১৮), জিপিটি-২ (২০১৯), জিপিটি-৩ (২০২০) এবং চ্যাটজিপিটি (২০২২-২০২৩) আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। জিডিপি-৩ আবিষ্কারের পর থেকে ইন্টারনেট জগতে এক বিস্ময়কর পরিবর্তন আসে। যা পূর্বে কোনোদিন এমনভাবে দেখা যায়নি ।‌২০২০ সালে এআই ব্যবহারকারী সংখ্যা ছিল ২৫০ মিলিয়ন, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৭৫০ মিলিয়নে। এই বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী তাদের প্রয়োজনীয় কাজ অতি সূক্ষ্মভাবে অল্প সময়ে এআই মাধ্যমে সম্পূর্ণ করতে পারছে।

কৃষি থেকে বিমান চালানো- প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কৃষি যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে খরচ কমানোর জন্য অটোমেটেড সিস্টেম আবিষ্কার করা হয়েছে, যেখানে এআইয়ের প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে। চাকরির ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের জটিল সমস্যায় পড়তে হয় না। যেকোনো ধরনের অ্যালগরিদম , ফ্লোচার্ট অথবা প্রমোশন লেটার, রিজাইন লেটার, ডাটা অ্যানালাইসিসসহ সব ধরনের কাজ এআইয়ের মাধ্যমে করা সম্ভব হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জন্য অল্প সময়ে যেকোনো ধরনের তথ্য চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে পেয়ে যাচ্ছে। যেকোনো ধরনের অ্যাপ্লিকেশন, সিভি লেখার জন্য আর দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের দোকানে বসে থাকার প্রয়োজন নেই।  এখন এক নিমিষে চ্যাট জিপিটির মাধ্যমে লেখা সম্ভব। বর্তমানে গবেষণা করার জন্য চ্যাট ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আগে কল্পনাও করা যায়নি। এছাড়াও বিনোদনের ক্ষেত্রেও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে এআই।

আমরা যদি চিন্তা করি একটি যন্ত্র মানবের কথা, এআই ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্র এমনভাবে ডেভেলপমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছে যা বাস্তবে দেখা যাচ্ছে। এটা বিজ্ঞানের এক অনন্য আবিষ্কার।

ধরুন, আপনি একটি আবহাওয়া অফিসে চাকরি করেন । আপনার আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদানের জন্য পূর্বের বিভিন্ন ধরনের ডাটা অ্যানালাইসিস করা প্রয়োজন। তাহলে আপনি এখন কি করবেন? আপনাকে অবশ্যই গবেষণাকৃত ডাটা বিভিন্ন ওয়েবসাইট অথবা আপনার স্লাইড অথবা বিভিন্ন কাগজপত্র থেকে খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু এ কাজ এআইয়ের মাধ্যমে এক নিমিষেই করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে গবেষণা করে আবহাওয়ার পূর্বভাস প্রদান করা সম্ভব।

আবার ধরুন, আপনি একজন চাকরিজীবী। অফিসে যাতায়াতের জন্য আপনার গাড়ি প্রয়োজন। কিন্তু আপনি গাড়ি চালাতে পারেন না। তাহলে সমাধান হিসেবে আপনি হয়তো চালক নিয়োগ দিবেন। কিন্তু এ সমস্যার সমাধানও দিচ্ছে এআই। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এমন সব গাড়ি আবিষ্কার করা হয়েছে যেখানে চালকের কোন প্রয়োজন নেই। 

বিভিন্ন কারণে আপনি বাসার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বা আপনার বাসায় যন্ত্রপাতি অনেক সময় বন্ধ না করে আপনি অফিসে চলে যান। ফলে অফিস থেকে এসে ওই যন্ত্রপাতি বন্ধ করতে হয়। যা বাসার জন্য বিপদজনক। এআই এর কল্যাণে অফিসে বসে ঘরে কি হচ্ছে, কোন যন্ত্র চলছে, কোনটা বন্ধ আছে, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। 

এআই ব্যবহারে নানাবিদ সুবিধার সঙ্গে রয়েছে অসুবিধাও। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তৈরি হচ্ছে আসক্তি ও মানসিক ভারসাম্যহীনতা। এছাড়া তথ্যের নিরাপত্তা নিয়েও বড় চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে। এআই ব্যবহারের মাধ্যমে যেকোন মুহূর্তে অ্যালগরিদম, ফ্লোচার, কোডিং করা সম্ভব। ফলে বিভিন্ন ধরনের ভুয়া সফটওয়্যার ব্যবহার করে গোপনীয় তত্ত্ব হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব।

আমরা জানি, একজন মানুষের মাথায় লক্ষ লক্ষ কোষ থাকে। কিন্তু আমরা যদি কোষগুলো ব্যবহার না করি, তাহলে ব্রেন অকেজো হয়ে যায় এবং মানুষের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। আবার অতিরিক্ত এআই ব্যবহারের ফলে হাজার হাজার মানুষ চাকরিচ্যুত হচ্ছে। কারণ মানুষ যে কাজ করতে কয়েক ঘণ্টা লাগে, এআই সেটা কয়েক মিনিটেই করে দিছে। ফলে তৈরি হচ্ছে বেকারত্ব। যা দেশের জন্য অভিশাপ ডেকে আনতে পারে। 

এজন্য যেসব ক্ষেত্রে এআই দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারবে, শুধু সেসব ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত। আর যেগুলোতে ব্যবহার করলে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে এবং ক্ষতির কারণ হতে পারে, সেসব ক্ষেত্রে পরিত্যাগ করাই ভালো।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়