ঢাকা     সোমবার   ১৭ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ৩ ১৪৩১

উপকূলের দিকে এগোচ্ছে গভীর নিম্নচাপ, বাড়ছে শক্তি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৩, ২৫ মে ২০২৪   আপডেট: ১৮:৫৮, ২৫ মে ২০২৪
উপকূলের দিকে এগোচ্ছে গভীর নিম্নচাপ, বাড়ছে শক্তি

বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে উপকূলের দিকে এগোচ্ছে, বাড়ছে শক্তিও। আবহাওয়া অফিসের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গভীর নিম্নচাপটি তার অবস্থান থেকে উত্তর দিকে আরও অগ্রসর হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময়ে এটি প্রায় ৬৫ কিলোমিটার এগিয়েছে। এই অবস্থায় সমুদ্রবন্দরগুলোতে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত তোলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।

শনিবার (২৫ মে) দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া ৭ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নিম্নচাপটি শনিবার (২৫ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

এর আগে সকালে অধিদপ্তরের ৬ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গভীর নিম্নচাপটি সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

৭ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

গভীর নিম্নচাপকেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপকেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাতে গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তখন এটির নাম হবে ‘রেমাল’। নামটি ওমানের দেওয়া।

রেমাল রোববার বিকেল থেকে উপকূলে উঠে আসার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। সে সময় এর গতিবেগ উঠে যেতে পারে ঘণ্টায় ১৩৫ কিলেমিটার পর্যন্ত।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বলেছেন, ভারতের আবহাওয়া অফিস, চীনের আবহাওয়া অফিস, জাপানের আবহাওয়া অফিস এবং অন্যান্য দেশের আবহাওয়া অফিসের সাথে সমন্বয় রেখে আমরা যেটা পরিষ্কার বুঝতে পারছি, ঘূর্ণিঝড়টি আসন্ন। দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় সর্বোচ্চ ১০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।

আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সকালে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। রাত ৮টায় আবারও মন্ত্রণালয়ে সভা হবে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টির পর রোববার সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। রেমাল ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ হতে পারে। তবে, ‘সুপার সাইক্লোন’ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে এটিকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়, গতিবেগ ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় এবং গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।

উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর নামকরণ করেছে ওমান। আরবিতে এর অর্থ বালু। এই নামে ফিলিস্তিনের গাজা থেকে ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দূরে একটি শহরও রয়েছে।

হাসান/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়